আর ডানা মেলবে না মঙ্গলের পাখি, এক ইতিহাসের সমাপ্তি
আশাকে ছাপিয়ে সে চমকে দিয়েছে। ইচ্ছেমত ডানা মেলেছে মঙ্গলের আকাশে। সেই ডানা সে আর মেলবে না। কেন তা জানাল নাসা। শেষ হল এক যুগের।
২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নাসার পাঠানো মঙ্গলযান পারসিভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গলের মাটিতে পা রাখে। যার পেটে ছিল একটি পাখি। নাম ইনজেনুইটি। পৃথিবীর বাইরে যদি প্রথম কোনও হেলিকপ্টার অন্য গ্রহের মাটিতে পা রেখে থাকে তবে তা ইনজেনুইটি।
নাসার বিজ্ঞানীরা ইনজেনুইটিকে পাঠিয়েছিলেন বিশেষ কোনও কাজে নয়, বরং এটিকে মঙ্গলের আকাশে উড়িয়ে তাঁরা দেখার চেষ্টা করেছিলেন মঙ্গলের আবহাওয়ায় এই হালকা হেলিকপ্টারটি আদৌ উড়তে পারে কিনা।
ইনজেনুইটি খুব বেশি হলে ৫ বার লাল গ্রহের আকাশে উড়তে পারবে বলে মনে করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এটা পাঠানোই হয়েছিল পরীক্ষামূলক ভাবনা থেকে।
কিন্তু সেই ইনজেনুইটি তারপর লাল গ্রহে যা করে তা এক ইতিহাস। বিজ্ঞানীরাও তার এই কাণ্ড বিশ্বাস করতে পারছিলেননা।
ইনজেনুইটি ৫ বার পার করেও মঙ্গলের আকাশে মাঝে মাঝেই উড়তে শুরু করে। যা দেখে বিজ্ঞানীরাও উৎসাহী হন। তাঁরা তাকে আরও বেশি সময় আকাশে রাখা শুরু করেন। বেশি উঁচুতেও ওড়ানোর চেষ্টা করতে থাকেন।
ইনজেনুইটিও সাড়া দিতে থাকে। এভাবে প্রায় ৩ বছরে মাঝে মাঝেই সে মঙ্গলের আকাশে উড়ে বেড়িয়েছে। নানা তথ্যও সংগ্রহ করেছে। এভাবে ৭২ তম বার সে উড়েছিল গত ১৮ জানুয়ারি।
এই উড়ানে ইনজেনুইটিকে ৪০ ফুট উঁচুতেও ওড়ানো সম্ভব হয়। কিন্তু ইনজেনুইটি নামার সময় আচমকা তার সঙ্গে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
প্রসঙ্গত মঙ্গলের মাটিতে ঘুরে বেড়ানো পারসিভিয়ারেন্স রোভারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত ইনজেনুইটি। পারসিভিয়ারেন্স ইনজেনুইটির খবর পাঠাত পৃথিবীতে।
বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছিলেননা কেন ইনজেনুইটির সঙ্গে পারসিভিয়ারেন্সের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। তবে সেটি কি ভেঙে পড়ল মঙ্গলে? তাও পরিস্কার ছিলনা।
বারবার চেষ্টা করে অবশেষে কিন্তু ফের সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয় মঙ্গলে নাসার পাখি ইনজেনুইটির সঙ্গে। আর তখনই দেখা যায় তার ২টি ডানা চোট পেয়েছে। ফলে সে আর কখনও আকাশে উড়তে পারবেনা। এখানেই শেষ তার উড়ান।
মঙ্গলের বুকে সর্বোচ্চ ৫ বার ওড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে গিয়ে ৭২ বার ইনজেনুইটি লাল গ্রহের আকাশে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। তার কথা মহাকাশ বিজ্ঞান কখনও ভুলবে না। কার্যত একটা যুগের শেষ হল ইনজেনুইটির স্তব্ধ ডানার হাত ধরে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা