বৃহস্পতির চাঁদে লাভা স্রোত আসে কোথা থেকে, কিনারা হল ৪৪ বছরের রহস্যের
৪৪ বছর ধরে এ রহস্যের কিনারা করতে হিমসিম খেয়েছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। রহস্যের কিনারা হওয়ার পর তাঁদের অনুমান কতটা ভুল তাও প্রমাণ হল।
বৃহস্পতিগ্রহের ৯৫টির মত চাঁদ আছে বলে এখনও জানতে পারা গেছে। তবে তাদের মধ্যে ৪টিই প্রধান। যাদের নিয়ে বিজ্ঞানীরা চর্চা করে থাকেন। এগুলি হল ইউরোপা, গ্যানিমিড, ক্যালিস্টো এবং আইয়ো।
বৃহস্পতির ওপর নজরদারি করতে জুনো নামে যে যান তার আশপাশে ঘুরছে তা কেবল বৃহস্পতিগ্রহ বলেই নয়, বৃহস্পতির উপগ্রহগুলির উপরও নজরদারি চালাচ্ছে। তাতেই ধরা পড়েছে আইয়ো নামে উপগ্রহটি জুড়ে শুধুই আগ্নেয়গিরি ছড়িয়ে আছে। তা থেকে প্রায়ই লাভা স্রোত বেরিয়ে আসছে।
১৬১০ সালের ৮ জানুয়ারি গ্যালিলিও গ্যালিলি বৃহস্পতির ৪টি উপগ্রহের দেখা পান। তার একটি এই আইয়ো। তবে সে সময় আইয়োর শরীর জুড়ে কি চলছে তার খোঁজ মেলেনি।
১৯৭৯ সালে নাসার ভয়েজার ১ নামে যান থেকে নেওয়া ছবি থেকে নাসার বিজ্ঞানী লিন্ডা মোরাবিতো প্রথম জানান আইয়ো-তে আগ্নেয়গিরি রয়েছে। তা থেকে অগ্নুৎপাত হয়। পরে জুনো মিশনে জানা যায় আইয়ো জুড়ে ছড়িয়ে আছে প্রচুর আগ্নেয়গিরি। কার্যত গোটা উপগ্রহটাই আগ্নেয়গিরিতে ভরা।
এই এত পরিমাণ লাভা আসে কোথা থেকে? এ প্রশ্নের উত্তর কিন্তু মেলেনি। তারপর থেকে বিজ্ঞানীরা বহু চেষ্টা করেছেন এত আগ্নেয়গিরি থেকে অহরহ বেরিয়ে আসা প্রচুর পরিমাণে লাভার উৎস সম্বন্ধে জানতে। কিন্তু জানতে পারেননি।
তাঁরা একসময় অনুমান করে নেন যে আইয়ো-র জমির তলায় একটি লাভার মহাসমুদ্র রয়েছে। সেই মহাসমুদ্র থেকে বিভিন্ন আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে লাভা বেরিয়ে আসছে আইয়ো-র উপরিভাগে।
কিন্তু ২০২৩ ও ২০২৪ সালে নাসার যান জুনো এই আইয়ো-র খুব কাছে পৌঁছে যায়। আইয়ো-র জমি থেকে মাত্র দেড় হাজার কিলোমিটার উপর দিয়ে উড়তে থাকে জুনো।
তখনই জুনো নানা অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে আইয়ো-কে জানতে। যা বিজ্ঞানীদের অবাক করে ৪৪ বছরের পুরনো এক রহস্যের কিনারা করে। বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন, আইয়ো-র মাটির তলায় কোনও লাভার মহাসমুদ্র নেই।
উপগ্রহ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রচুর আগ্নেয়গিরির প্রতিটির নিজস্ব একটি করে লাভার চেম্বার রয়েছে। যেখানে রয়েছে প্রচুর গলিত লাভা। প্রতিটি আগ্নেয়গিরি তার নিজের সেই চেম্বারে থাকা লাভাই উগরে দেয়।
তার মানে একটি লাভা সমুদ্র থেকেই লাভা বিভিন্ন আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসেনা। প্রতিটি আগ্নেয়গিরিরই আলাদা সংস্থান রয়েছে গলিত লাভার। নাসার এই অনন্য আবিষ্কার আইয়ো সম্বন্ধে ধারনাই বদলে দিল।