এখনও ভারতের বহু গ্রামে পঞ্চায়েত বা সালিসি সভা বসিয়ে স্থানীয় সমস্যা মিটমাটের রীতি আছে। অনেকটা সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা চলে সেখানে। সেখানে পঞ্চায়েতের কথাই শেষ কথা। উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলার লৌঙ্গা গ্রামও তার ব্যতিক্রম নয়। সেই গ্রামের বাসিন্দা সৌদান সিংয়ের সন্দেহ ছিল তাঁর স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে। স্ত্রী অন্য পুরুষের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত এই অভিযোগ নিয়ে ওই ব্যক্তি দ্বারস্থ হন গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান শের সিংয়ের কাছে। অভিযোগ, বিচারে পঞ্চায়েত প্রধান যা নিদান দেন, তার কাছে হার মেনে যায় মধ্যযুগীয় বর্বরতা। অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ‘অপরাধ’-এ ব্যাপক মারধর করা হয় সৌদান সিংয়ের স্ত্রীকে। কোমরের বেল্ট, লাঠি ইত্যাদি দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে প্রহার পর্ব। অভিযোগ, একজন মহিলার ওপর হওয়া নির্মম অত্যাচারের সাক্ষী হতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন গ্রামের বহু মানুষ। অথচ কেউ কোনও প্রতিবাদ করেননি।
গত ১০ মার্চ মহিলার ওপর হওয়া সেই নারকীয় নির্যাতনের ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করে নেন গ্রামের কেউ। ৭৩ সেকেন্ডের সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হতেই নজরে আসে পুলিশের। নিগৃহীতা মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা। পুলিশের কাছে ধর্মেন্দ্র লোধি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন নির্যাতিতা বধূ। তিনি জানান, গত ৫ মার্চ প্রেমিকের সঙ্গে অন্য গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে ওঠেন তিনি। মহিলার দাবি, গত ১০ মার্চ গ্রামের কয়েকজন লোক মিলে তাঁকে লৌঙ্গা গ্রামে ডেকে নিয়ে আসে। তারপর গ্রামের ভিতর গাছের সঙ্গে বেঁধে ব্যাপক মারধর করা হয় তাঁকে। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকলেও কেউ তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। নির্যাতিতার দাবি, তাঁকে অত্যাচারিত হতে দেখে অনেকে সেইসময় খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছিল। আর যাঁরা প্রতিবাদ করা চেষ্টা করেছিল, তাঁদের কথাও কেউ শোনেনি বলে পুলিশকে জানান অত্যাচারিত মহিলা। তাঁর আরও দাবি, গাছতলাতেই তাঁর শাস্তির মেয়াদ ফুরিয়ে যায়নি। পরে ঘরে গিয়ে পঞ্চায়েত প্রধান ও তাঁর অনুগামীরা মহিলার শ্লীলতাহানি করে। সেই শ্লীলতাহানির দৃশ্য অন্য লোকজনকে দিয়ে ভিডিওবন্দি করে নেওয়া হয় বলে দাবি তাঁর। তদন্তে নেমে অভিযুক্ত স্বামী, গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান ও তাঁর ছেলেকে বুধবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরও ১৮ জনের বিরুদ্ধের মামলা রুজু করা হয়েছে।