তফশিলি জাতি ও উপজাতির আওতাভুক্ত মানুষজনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন সরলীকরণের বিরুদ্ধে সোমবার ভারত বন্ধের ডাক দেয় দেশের বেশ কয়েকটি প্রথমসারির দলিত সংগঠন। সকাল থেকেই শুরু হয় অশান্তি। চলে গুলি। পুলিশ-বন্ধ সমর্থকদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ, আগুন, ভাঙচুর, জোর করে বন্ধ করানো, অবরোধ সহ এদিন বন্ধ বেশ কয়েকটি রাজ্যে হিংসাত্মক চেহারা নেয়। মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র সহ কয়েকটি জায়গায় প্রবল হিংসা ছড়ায়। গুলি চলে। শুধু মধ্যপ্রদেশেই সোমবার ৬ জনের মৃত্যু হয়।
মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে হিংসায় ৩ জনের, ভিন্দে ২ জনের ও মোরেনায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের অনেক জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। এছাড়া রাজস্থানের আলোয়ারে উত্তেজিত বন্ধ সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালায়। সেখানে গুলিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর এসেছে বিহার থেকেও। পাটনায় জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধে ১ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। এছাড়া উত্তরপ্রদেশের মেরঠ ও মুজফফরনগরে বন্ধকে ঘিরে হিংসায় ১ জন করে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। অনেক জায়গায় কার্ফু জারি হয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, বিএসপি নেত্রী মায়াবতী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলিতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়কে কেন্দ্র করে এদিনের রক্তক্ষয়ী বন্ধের জেরেই শুধু মৃত্যুই নয়, কোথাও থমকে গেল সিবিএসই-র পরীক্ষা, কোথাও থমকে গেল ট্রেন, কোথাও হল ভাঙচুর, কোথাও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে পথ অবরোধ। কোথাও বন্ধ চেহারা নিল কর্মহীন অলস দিবসের। সপ্তাহের প্রথম কর্মব্যস্ত দিনেই দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে থমকে গেল জনজীবন।
পশ্চিমবঙ্গে বন্ধের তেমন কোনও প্রভাব না পড়লেও বন্ধের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, পঞ্জাব, রাজস্থানে। পঞ্জাবে সব স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাস্তাঘাট অনেকটাই শুনশান। মানুষ বড় একটা বাইরে বার হওয়ার ঝুঁকি নেননি এখানে।
অনেক জায়গায় বন্ধ সফল করতে বন্ধ সমর্থকদের সকাল থেকেই হাতে তরোয়াল, লাঠি, ধারাল অস্ত্র, বেসবল ব্যাট হাতে রাস্তায় ঘুরতে দেখা যায়। অনেক জায়গায় সকালে দোকানপাট খুললেও তা বন্ধ সমর্থকেরা ভয় দেখিয়ে বন্ধ করিয়ে দেন বলে অভিযোগ। অনেক জায়গায় রেল অবরোধ হয়। ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হন নিত্যযাত্রী থেকে দূরপাল্লার যাত্রীরা।
রাজস্থানের বারমের, হিন্দায়ুন ও কারাউলিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এছাড়া মধ্যপ্রদেশের মোরেনায় কার্ফু জারি হয়েছে। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে গোয়ালিয়রের কিছু অংশ ও সাগরে। অনেক জায়গায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। গুজরাটের আমেদাবাদে রাস্তায় শুয়ে পড়ে অবরোধ করেন বন্ধ সমর্থকেরা। মেরঠে পুলিশ আউটপোস্টে আগুন ধরিয়ে দেন বন্ধ সমর্থকেরা।
সোমবারের বন্ধে হিংসা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলিকে হিংসা না ছড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। কেন্দ্রীয় সরকার এসসি/এসটি আইনকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম রায় নিয়ে শীর্ষ আদালতের কাছে একটি রিভিউ পিটিশন জমা করেছে।