একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে দাম্পত্য সম্পর্কে বিচ্ছেদ, অশান্তি, মনোমালিন্য শব্দগুলোর সঙ্গে আজ অভ্যস্ত সমাজ। স্ত্রী স্বামীর অথবা স্বামী স্ত্রীর বোঝা টানতে অপারগ, এমন নিদর্শন ভুরি ভুরি। উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা বিমলাদেবী অবশ্যই তার উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। ক্ষয়িষ্ণু সময়ে দাঁড়িয়ে ‘সাত জনম’-এর প্রতিশ্রুতি পালন কিভাবে করতে হয়, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন তিনি।
বিমলাদেবীর স্বামী ছিলেন পেশায় ট্রাক চালক। ট্রাকের অ্যাক্সিলারেটরে ডান পায়ের চাপে তিনি ঝড় তুলতেন রাস্তায়। আজ অবশ্য দুই পায়ের কোনওটাতেই সাড়া পাননা। কয়েক মাস আগে দুরারোগ্য ব্যাধি কেড়ে নিয়েছে চলন শক্তি। সংসারের উপার্জনকারী মানুষটি আজ চলৎশক্তিহীন। তা বলে তাঁকে ফেলে চলে যাননি তাঁর স্ত্রী বিমলা। বরং বিপদের দিনে ঠান্ডা মাথায় স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন।
স্বামীর নামে প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র পেলে সরকারের দেওয়া প্রতিবন্ধী ভাতায় সংসারটুকু চলে যাবে অনায়াসে। একথা ভালোমতোই বুঝতে পেরেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মথুরার বাসিন্দা বিমলাদেবী। তাই রাজ্যের সিএমও দফতরে স্বামীর হয়ে আবেদন জানান তিনি। দফতরের কর্মচারিরা তাঁকে জানান, শংসাপত্র পেতে আবেদনকারীর ছবি লাগবে। কিন্তু ছবি তুলতে দূরের দোকানে যাওয়া সম্ভব নয় অসুস্থ স্বামীর পক্ষে। তাই ভেবেচিন্তে প্রতিবন্ধী স্বামীকে কাঁধে নিয়ে নিজেই দোকানের দিকে রওনা দেন বিমলাদেবী।
যে সময়ে দাঁড়িয়ে দাম্পত্য সম্পর্কের ভাঙ্গন দেখতে অভ্যস্ত মানুষ, সেই সময়ে স্বামীর বোঝা অনায়াসে কাঁধে তুলে নেওয়ায় বিমলাদেবীকে কুর্নিশ না জানিয়ে থাকতে পারেননি পথচারীরা।
প্রতিবন্ধী স্বামীকে কাঁধে নিয়ে বিমলাদেবীর লড়াই চালানোর সেই করুণ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে নেন কেউ কেউ। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরে আসে স্থানীয় প্রশাসনের। প্রতিবন্ধী শংসাপত্রসহ বিমলাদেবীর স্বামীর জন্য ট্রাই-সাইকেলের বন্দোবস্ত করার আশ্বাস দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।