১৬ বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত স্বঘোষিত ধর্মগুরু আসারাম বাপুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল যোধপুর আদালত। আমৃত্যু তাকে গারদের পিছনেই কাটাতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গত প্রায় ৫ বছর ধরে বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন রাজস্থানের যোধপুর সংশোধনাগারের কুঠুরি ছিল তার ঠিকানা। চলছিল মামলা। অবশেষে বুধবার হল ভাগ্য নির্ধারণ। ২০১৩-য় যোধপুরের মানাই গ্রামে তার আশ্রমে ১৬ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের মামলায় বুধবার সকালে স্বঘোষিত ধর্মগুরু আসারাম বাপুকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। গত বছর একইভাবে স্বঘোষিত ধর্মগুরু রাম রহিমের সাজা ঘোষণার পর তার ভক্তদের তাণ্ডব এখনও কেউ ভোলেননি। সেকথা মাথায় রেখে এদিন সংশোধনাগারের মধ্যেই আসারাম বাপুকে রাখা হয়। সেখান থেকেই আদালতের কর্মপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হয়। সংশোধনাগার থেকে বার করে আদালত পর্যন্ত নিয়ে যেতে গেলে আসারামের ভক্তকুল তাণ্ডব চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করেই এই ব্যবস্থা করা হয়।
আসারামের সঙ্গে তার ২ শিষ্যকেও দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। শিল্পী ও শরদ নামে ওই ২ শিষ্যকে ২০ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই মামলায় অপর ২ অভিযুক্ত শিবা ও প্রকাশকে রেহাই দিয়েছে আদালত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কিশোরীকে ধর্ষণ, আটকে রাখা, ভয় দেখানো, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মামলা চলছিল। এদিন আসারাম বাপুর সাজা ঘোষণাকে সামনে রেখে রাজস্থান, গুজরাট ও হরিয়ানা ৩ রাজ্যে নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করা হয়। উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে নির্যাতিতার বাড়ির বাইরে মোতায়েন করা হয় পুলিশবাহিনী।
মধ্যপ্রদেশে আসারাম বাপুরই একটি আশ্রমে পড়াশোনা করত ওই নাবালিকা। ২০১৩ সালের অগাস্ট মাসে ওই নাবালিকাকে ভূতে ধরেছে বলে জানিয়ে তাকে যোধপুরে আসারাম বাপুর আশ্রমে নিয়ে আসা হয়। সঙ্গে ছিলেন তার মা-বাবা। তাঁদের জানানো হয়, আসারাম বাপু তাঁদের মেয়ের ভূত ছাড়িয়ে দেবে। তাই তাকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে মা-বাবাকে আশ্রমের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। অভিযোগ ছিল সেখানেই আসারাম বাপু ওই ১৬ বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণ করে। এই ঘটনার পর অবশ্য চুপ করে থাকতে পারেনি নির্যাতিতা ও তার পরিবার। তাদের অভিযোগক্রমে আসারামকে গ্রেফতার করা হয়। আর অন্যদিকে শুরু হয় নির্যাতিতা ও তার পরিবারের ওপর সবরকমভাবে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা।
নির্যাতিতার অভিভাবকদের দাবি, শেষ কবছর তাঁদের কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে কাটাতে হয়েছে। হুমকি এসেছে, টাকার লোভ দেখানও হয়েছে, ভয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু তাঁরা নিজেদের অবস্থানে অবিচল থেকেছেন। এমনকি শোনা গেছে যে পুলিশ আধিকারিক এই মামলার তদন্ত করছিলেন তাঁকেও দিনের পর দিন আসারাম বাপুর ভক্তদের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে।
এত লড়াইয়ের পর এদিনের রায়ে কার্যতই খুশি নির্যাতিতার মা-বাবা। তাঁদের দাবি, এতকিছুর পর তাঁদের মেয়ে বিচার পেল। যদিও আসারামের আশ্রমের তরফে জানানো হয়েছে তারা যোধপুর আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল করবে।