প্রায়শই রাতের দিকে চোখের সামনে বালিঝড়ের নাচন দেখতে অভ্যস্ত মরুপ্রদেশের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিনের চেনা ঝড়টাই আচমকা তিরিক্ষি মেজাজ ধারণ করে বুধবার রাতে। আচমকাই রাশি রাশি ধুলো পাক দিয়ে ওঠে রাজস্থানের আলোয়ার, ঢোলপুর ও ভরতপুর জেলার বিস্তীর্ণ অংশে। ধুলোর ঘূর্ণিঝড়ে ঘোলাটে হয়ে ওঠে চারপাশ। ঝড়ের পাশাপাশি আকাশের বুক চিরে ঘন ঘন বাজ পড়তে শুরু করে। ঝড় ও বজ্রপাতের দরুন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ৪০ টির মত মাটির বাড়ি। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে অন্ধকারে ঢেকে যায় একাধিক গ্রাম। ঝড়ে ঘরের দেওয়াল ভেঙে পড়ে ঘুমের ঘোরেই চাপা পড়ে মারা যান বেশ কয়েকজন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে ভরতপুর জেলা। সেখানে এখনও অবধি ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পাশের জেলা ঢোলপুরে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। আলোয়ারেও মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। জখম হয়েছেন শতাধিক মানুষ। সবমিলিয়ে ঝড়ের জেরে বাড়ির দেওয়াল ধসে ও বজ্রপাতের তাণ্ডবে এখনও রাজস্থানে মোট মৃতের সংখ্যা ৩৫। প্রবল ধুলোঝড়়ে বিধ্বস্ত আলোয়ার, ঝুনঝুনু ও বিকানের সহ রাজস্থানের বেশ কিছু এলাকা।
রাজস্থান ছাড়াও প্রাণহানি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে। এ রাজ্যে মৃতের সংখ্যা রাজস্থানকেও ছাড়িয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে ঝড়বৃষ্টিতে মৃতের সংখ্যা ৬৪ ছুঁয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করছে প্রশাসন। উত্তরপ্রদেশে প্রবল ধুলো ঝড়ে শুধু আগ্রাতেই মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। তছনছ হয়ে গেছে গোটা শহর। এছাড়া বিজনৌরে ৩ জন, কানপুরে ৩ জন, সাহারানপুরে ২ জন ও বরেলিতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গা মিলিয়ে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রদেশেও ধুলো ঝড়ে তাণ্ডবে ২ জনের মৃত্যু খবর মিলেছে।
পাশাপাশি উত্তরাখণ্ডের চমোলি ও উত্তরকাশীতে হঠাৎ মেঘভাঙা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট চলে গেছে জল, কাদার তলায়। পাহাড়ি এলাকায় ধস নামায় আটকে পড়েছেন বহু তীর্থযাত্রী। পাহাড় বেয়ে নেমে আসা কাদামাটিতে অনেক গাড়ির সিংহভাগ ডুবে গেছে। স্থানীয় মানুষ থেকে পর্যটক, সকলের চিন্তা বারিয়ে হাওয়া অফিস জানিয়ে দিয়েছে উত্তরাখণ্ডের অধিকাংশ জায়গায় আগামী ৪৮ ঘণ্টা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। ফলে অবস্থা আরও শোচনীয় আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। অবস্থার দিকে কড়া নজর রাখছে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন। বিপর্যয় মোকাবিলায় দ্রুত গতিতে চলছে উদ্ধারকাজ।
শুধু রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ বা উত্তরাখণ্ড বলেই নয়, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও চণ্ডীগড়েও ভারী বর্ষণ ও ধুলো ঝড়ের কারণে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে খেতের ফসল। গাছ ও বাতিস্তম্ভ উপরে পড়ে অনেক রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। দিল্লিতে খারাপ আবহাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি বিমানের উড়ান বাতিল হয়েছে।