National

কংগ্রেসের সমর্থনে জেডিএস, নাকি ইয়েদুরাপ্পাকে সুযোগ, বল এখন রাজ্যপালের কোর্টে

সকালের ছবি বদলে গেল বিকেলে। সকালে যেখানে বিজেপি কর্ণাটকে একাই সরকার গড়তে চলেছে বলে মনে হচ্ছিল। সেখানে দুপুর গড়াতেই বিজেপির এগিয়ে থাকা আসনের সংখ্যা গেল কমে। আর সেখানে বেড়ে গেল কংগ্রেসের আসন। বিজেপিকে রুখতে মরিয়া কংগ্রেস এই অবস্থায় ৭৮টি আসন নিয়ে ৩৭টি আসন দখলে রাখা জেডিএস সুপ্রিমো দেবেগৌড়ার সঙ্গে দেখা করে। কংগ্রেসের তরফে জানান হয় জেডিএস সরকার গড়ুক। কংগ্রেস তাদের নিঃশর্ত সমর্থনে প্রস্তুত। এইচডি দেবেগৌড়ার পুত্র কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী করতেও অনুরোধ করে কংগ্রেস। এমন অফার হাতছাড়া করেনি জেডিএস। তারা তাতে সমর্থন জানিয়েছে। কংগ্রেস সরকারেও থাকতে রাজি নয় বলেই খবর। যদিও জেডিএস শিবির চাইছে কংগ্রেস মন্ত্রিত্ব নিক। অন্যদিকে ২ নির্দল বিজয়ীরও সমর্থন এই জোটের সঙ্গেই যাচ্ছে বলে দাবি করেছে কংগ্রেস। ফলে তারা ম্যাজিক ফিগার অনায়াসে পার করতে পারছে।

অন্যদিকে এদিন কুমারস্বামী রাজ্যপালের কাছে সরকার গঠনের দাবি জানাতে যখন বাড়ি থেকে বিকেলে বার হচ্ছেন, তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অনন্ত কুমারকে সঙ্গে করে বিজেপির এবারের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ইয়েদুরাপ্পা পৌঁছে যান রাজ্যপালের কাছে। সবচেয়ে বেশি আসন থাকা দল হিসাবে বিধানসভায় নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে তাঁকে একটা সু‌যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। অনুরোধ শুনলেও কোনও সিদ্ধান্তের কথা রাজ্যপাল জানাননি বলে খবর। বিকেলে এরপর তাঁর কাছে সরকার গঠনের দাবি নিয়ে হাজির হন কুমারস্বামী।


ফলে এখন বল রাজ্যপালের কোর্টে। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন কংগ্রেস-জেডিএস জোটকে সরকার গঠনের জন্য ডাকবেন। নাকি বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে তাদের একবার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ দেবেন।

এদিন কার্যত তীরে এসে তরী ডুবেছে বিজেপির। সকালে মনে হচ্ছিল বিজেপি একাই নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়তে চলেছে। বিজেপি শিবিরের উচ্ছ্বাসও তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু দুপুর হতেই ছবি ঘুরতে শুরু করল। কর্ণাটকে সরকার গড়তে ম্যাজিক ফিগার ১১২টি আসন। ২২৫ আসনের বিধানসভায় এবার অবশ্য ভোট হয়েছে ২২২টি আসনে। সেখানে ম্যাজিক ফিগার থেকে এগিয়ে থেকে ১২১টি আসনে লিড করছিল বিজেপি। যেখানে পদ্ম শিবিরের গতবারের প্রাপ্তি ছিল ৪০টি আসন। অন্যদিকে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ৬০-এর আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল। যেখানে গতবার তাদের দখলে ছিল ১২২টি আসন। জেডিএস মোটামুটি তাদের গতবারের ফল ধরে রেখেছিল। তবে উল্লেখ‌যোগ্যভাবে কমেছিল অন্যান্যদের আসন সংখ্যা।


বেলা বাড়তেই ক্রমশ ১২১-এর লিড থেকে পড়তে থাকে বিজেপির এগিয়ে থাকা আসনের সংখ্যা। অন্যদিকে বাড়তে থাকে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা। বিজেপির এই কমা বিকেলের দিকে যেখানে থিতু হয় সেখানে কিন্তু সকালে জেগে ওঠা সেই নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের সম্ভাবনা অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। ১০৫-এ নেমে যায় বিজেপির আসন প্রাপ্তির সম্ভাবনা। সেখানে কংগ্রেসের পৌঁছে যায় ৭৮-এ।

এই অবস্থায় অপেক্ষা না করে তড়িঘড়ি কংগ্রেস নেতারা হাজির হন জেডিএস সুপ্রিমো এইচডি দেবেগৌড়ার বাড়ি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, তারা দেবেগৌড়াকে সরকার গড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। কংগ্রেস তাদের নিঃশর্ত সমর্থন দেবে। দেবেগৌড়ার ছেলে কুমারস্বামীকেই মুখ্যমন্ত্রী করার প্রস্তাব দেয় কংগ্রেস। রাজি হতে বড় একটা সময় নেয়নি জেডিএস নেতৃত্ব।

এদিন একটা কথা মেনে নিচ্ছেন সব রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞই। বিজেপির দাক্ষিণাত্য অভিযান কিন্তু শুরু হয়ে গেল। অন্যদিকে কংগ্রেসের কর্ণাটকও হারানোর পরিস্থিতি কিন্তু রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। কারণ কংগ্রেসের হাতে থাকা একের পর এক রাজ্য হাত ছাড়া হয়েই চলেছে। এই অবস্থায় রাহুল গান্ধীকেই সামনে রেখে কংগ্রেসের ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে লড়া উচিত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞেরা। একদিকে পদ্ম শিবিরের সেনাপতি হিসাবে যেভাবে একের পর এক রাজ্যে বিজেপিকে দুরন্ত ফল পাইয়ে দিচ্ছেন কুশলী অমিত শাহ, সেখানে রাহুল গান্ধী কিন্তু কার্যত কংগ্রেসের জন্য ফ্লপ শোয়ে পরিণত হয়েছেন। এই অবস্থা রাহুল গান্ধীতে ভরসা রেখেই কংগ্রেস কী আগামী দিনেও চলবে, নাকি দ্বিতীয় কোনও ভাবনাকে গুরুত্ব দেবে তা কিন্তু এই মুহুর্তে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button