শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সংখ্যা জোগাড় করতে পারল না বিজেপি। ফলে আস্থা ভোটেই গেল না তাঁরা। কার্যত হার মেনে নিয়ে আস্থা ভোটের আগে কর্ণাটক বিধানসভায় বক্তব্য পেশের সময়ই ইস্তফার কথা জানিয়ে দিলেন ৫৩ ঘণ্টা আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়া ইয়েদুরাপ্পা। ফলে কংগ্রেসের সমর্থনে জেডিএস নেতা কুমারস্বামী বসতে চলেছে কর্ণাটকের মসনদে। এদিনের এই ফলকে বড় জয় হিসাবেই দেখছেন কংগ্রেস নেতারা। কোনও অবস্থাতেই কর্ণাটকে বিজেপিকে সরকার গড়তে না দেওয়ার তাঁদের মরিয়া চেষ্টা অবশেষে সফল হল।
বিধানসভা নির্বাচনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ছিল ১১২টি আসন। কিন্তু বিজেপি পায় ১০৪টি। এই অবস্থায় ফলাফল প্রকাশের পরই বিজেপিকে ঠেকাতে আসরে নামে ৭৮টি আসন হাতে থাকা কংগ্রেস। সরকার গড়তে জেডিএসকে নিঃশর্ত সমর্থনের কথা জানায় তাঁরা। এমনকি জেডিএস সরকার গড়ায় তাঁদের সমর্থন থাকলেও তাঁরা কোনও মন্ত্রিত্ব চায়না বলেও জানিয়ে দেয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। লক্ষ্য একটাই। বিজেপিকে যেভাবে হোক আটকানো।
মাত্র ৩৮টি আসন হাতে থাকা জেডিএস এই সুবর্ণ সুযোগে মত দিতে দেরি করেনি। ওদিনই তাঁরা রাজ্যপালের কাছে সরকার গড়ার দাবি নিয়ে হাজির হয়। কংগ্রেস-জেডিএস জোট দাবি করে তাঁদের ১১৬ জন বিধায়ক রয়েছেন। ফলে তাঁদের সরকার গড়তে দেওয়া হোক। অন্যদিকে বিজেপির ঝুলিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও তারা সর্ববৃহৎ দল হিসাবে সরকার গড়ার দাবি জানায়। বিজেপি দাবি করে তাঁরা সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় আসন জোগাড় করে নেবে।
এই অবস্থায় রাজ্যপাল বিজেপিকে সরকার গড়ার ডাক দেন। যা কোনও অবস্থাতেই মেনে নিতে পারেনি কংগ্রেস। কংগ্রেসের দাবি ছিল গোয়া বা মণিপুরে তাঁরা সর্ববৃহৎ দল হিসাবে থাকলেও তাঁদের না ডেকে জোট গড়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠদের ডাকা হয়েছিল সরকার গড়তে। তাহলে সেই তত্ত্ব কর্ণাটকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হলনা কেন? এই প্রশ্ন তুলে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সুপ্রিম কোর্ট মাঝরাতে তাঁদের দাবিদাওয়া শুনলেও ইয়েদুরাপ্পার শপথ গ্রহণের ওপর স্থগিতাদেশের দাবি নামঞ্জুর করে। ফলে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন ইয়েদুরাপ্পা। তাঁকে ১৫ দিন সময় দেন রাজ্যপাল। তার মধ্যে তাঁদের বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টে কংগ্রেসের আবেদনের শুনানি শুরু হয়। যেখানে গত শুক্রবার শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয় ১৫ দিন নয়, মাত্র ১ দিনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে বিজেপিকে। শনিবারই বিধানসভায় আস্থা ভোটে অংশ নিতে হবে ইয়েদুরাপ্পা সরকারকে। শনিবার বিকেল ৪টেয় এই আস্থা ভোট হবে বলেও জানিয়ে দেয় আদালত।
এই অবস্থায় এদিন টানটান উত্তেজনার মধ্যেই বিধানসভায় সব দলের বিধায়করা হাজির হন। দর্শক হিসাবে আসেন বিজেপি ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু আস্থা ভোট হওয়ার আগেই নাটকীয়ভাবে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন ইয়েদুরাপ্পা। স্পষ্টতই বিজেপি বুঝিয়ে দিল তাঁদের পক্ষে আস্থা ভোটে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যা নেই। তা জোগাড়ও তাঁরা করে উঠতে পারেনি। তাই আস্থা ভোটের রাস্তায় তাঁদের আর গিয়ে লাভ নেই। প্রসঙ্গত এদিন বেলা থেকেই কর্ণাটকের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম দাবি করছিল ইয়েদুরাপ্পা আস্থা ভোটে অংশই নিচ্ছেন না। তাঁর ১৩ পাতার ইস্তফাপত্রও তৈরি। তাঁদের সেই দাবি এদিন বিকেলে সত্যি হল।
এবার কংগ্রেস-জেডিএসের পালা। তাঁরাই সরকার গড়ছে কর্ণাটকে। মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন এইচডি কুমারস্বামী। এদিকে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই কর্ণাটকের কোণায় কোণায় উৎসবে মেতে ওঠেন কংগ্রেস ও জেডিএস কর্মী সমর্থকেরা।