চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি না পড়ো ধরা। প্রচলিত আপ্তবাক্যটির মর্ম বোধহয় ভালমতই জানা ছিল ‘উলঙ্গ চোর’-এর। কেরালার ঘরে ঘরে এখন আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে তার কীর্তি কাহিনি। চোরটির এমন বিদঘুটে নামকরণের পিছনের কারণটাও কিন্তু যুতসই।
স্থানীয়দের দাবি, এডুইন জোশে নামের ওই অভিযুক্ত চুরি করার সময় কোনও পোশাক গায়ে রাখত না। তার চুরির স্টাইল বাকি পেশাদার চোরেদের থেকে ছিল একটু আলাদা। কি সেই স্টাইল? পুলিশ জানাচ্ছে, রাতের অন্ধকারে সহজে গা ঢাকা দিতে সে সারা গায়ে মেখে নিত নিকষ কালো রঙ। যাতে কেউ অন্ধকারে তাকে শনাক্ত করতে না পারে।
পুলিশ জানাচ্ছে, গৃহস্থ ও সিসিটিভির নজর থেকে বাঁচতে চোরটি তার মুখ ঢেকে ফেলত নিজের জাঙ্গিয়া দিয়ে। তারপর রাতের অভিযানে বেড়িয়ে প্রথমে সে চুরি করত একটা মোটর সাইকেল। তারপর গৃহস্থের বাড়ির দরজা-জানলা ভেঙে ঢুকে পড়ত নিঃসাড়ে। একে একে ঘর থেকে নিখুঁতভাবে সাফাই করত সমস্ত টাকা, গয়না, দামী দামী জিনিস।
যদি কোনওভাবে বাড়ির লোকজনের ঘুম ভেঙে যেত, তাহলে চিৎকার করার আগেই তাঁদের ওপর চড়াও হত সে। তারপর লোক জড়ো হওয়ার আগেই চুরি করা বাইকে চেপে এলাকা ছেড়ে চোখের নিমেষে চম্পট দিত এডুইন। কোনওভাবে যাতে কেউ তার সন্ধান না পায়, তাই প্রতিটি চুরির পর বাইক ফেলে দিত সে। পরের চুরির জন্য আবার একটা নতুন বাইক চুরি করত।
এইভাবে কেটে যাচ্ছিল মাসের পর মাস। কেরালার নেয়াত্তিঙ্কারা, পারাশালা, নেড়ুমাঙ্গার প্রায় ২৫টি বাড়ি লণ্ডভণ্ড করে দিব্যি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল ‘উলঙ্গ চোর’। তাকে খুঁজে পেতে ঘুম উড়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয় পুলিশের। চতুর চোরকে ধরতে ময়দানে নামে কেরালার গোয়েন্দা বিভাগ। অবশেষে কেরালার নেড়ুমাঙ্গার এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে চোরকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
প্রতিবেশি রাজ্য তামিলানাড়ুতে ঘাপটি মেরে থাকা চোরকে পাকড়াও করেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, ২৮ বছরের ওই যুবক আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছে। আইন নিয়ে যার চর্চা আছে, সেই তো পারে আইনের চোখে ধুলো দিতে। সে কথাই এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন আইনের রক্ষকরা।