৮ দিন ধরে ৩টি শিশু দেশের রাজধানীর একটি কোণায় সামান্য খাবারটুকু না পেয়ে খিদের জ্বালায় কষ্ট পেল। অথচ কেউ জানতেও পারল না! সেই দেশে যে দেশ কদিন আগেই নাকি বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে উঠে এসেছে! যেটুকু জানা যাচ্ছে, স্ত্রী ও ৩ শিশুকে নিয়ে মঙ্গল নামে এক ব্যক্তি মেদিনীপুর থেকে রুজির খোঁজে চলে আসেন দিল্লিতে। সেখানে রিক্সা চালানো শুরু করেন। চলে যাচ্ছিল কোনওরকমে। কিন্তু কদিন আগে তাঁর রিক্সাটি চুরি যায়। তারপর থেকে কাজের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন তিনি। গত শনিবার মঙ্গল তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের দিল্লির মান্ডাওলি এলাকায় এক বন্ধুর বাড়িতে রেখে কাজের খোঁজে বার হন।
এদিকে দিনের পর দিন ঘরে অনাহারে কাটতে থাকে মঙ্গলের স্ত্রী ও সন্তানদের দিন। ৩ জনের বয়স যথাক্রমে ২, ৪ ও ৮। বড় ২ জন দিল্লিতে একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পড়েও। এদিকে বাবা কাজের খোঁজে বাইরে। মা বুঝে উঠতে পারছেন না সন্তানদের মুখে কীভাবে অন্ন তুলে দেবেন। ৩ সন্তানই বমি করছে। এমন এক চরম অবস্থায় দিন কাটছিল তাঁদের। এরমধ্যে ৩ শিশু গত বুধবার আর সাড়া দিচ্ছেনা দেখে দ্রুত মঙ্গলের বন্ধুকে বিষয়টি জানান তাদের মা। তাঁরা ৩ শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকেরা তাদের পরীক্ষার পর মৃত ঘোষণা করেন। জানা যাচ্ছে পুলিশ যখন তাদের মাকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল তখন আগে পুলিশের কাছে একটু খাবার খেতে চান ওই মহিলা।
প্রাথমিক ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন ৩ শিশুর শরীরে এতটুকু ফ্যাট নেই। পাকস্থলীতে এতটুকু খাবার নেই! তাদের মৃত্যু যে অনাহার ও অপুষ্টির কারণেই হয়েছে তাও জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এমন মর্মান্তিক খবর সামনে আসতেই টনক নড়ে প্রশাসনের। ৩ শিশুর অনাহারে মৃত্যুর খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
৩ শিশুর মৃত্যুর পর এবার কিন্তু তাদের বাড়িতে এক এক করে হাজির হতে শুরু করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। বিজেপি দিল্লির আপ সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। আপ কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলছে। কংগ্রেস আপ ও বিজেপির দিকে আঙুল তুলছে। ঘোষণা হয়েছে ক্ষতিপূরণও। ইতিমধ্যেই মৃত শিশুদের বাড়িতে ঘুরে এসেছেন কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন, বিজেপি নেতা মনোজ তিওয়ারি।
দুর্ভাগ্য একটাই। ৩টি শিশু যখন সামান্য দুমুঠো অন্নের অভাবে দিনের পর দিন অমানুষিক কষ্টের সঙ্গে শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়াই করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল তখন কারও দেখা মেলেনি। এখন প্রশ্ন এ মৃত্যুর দায় তাহলে কার? প্রশ্ন থাকবে। কিন্তু এ লজ্জা দেশের লজ্জা। যা এদিন সারা বিশ্ব দেখল।