একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও এ কোন ভারতে বসবাস করছি আমরা? যেখানে এখনও পণের টাকা আদায়ের জন্য বাড়ির বউকে পর্যন্ত বেচে দিতে হাত কাঁপেনা স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের! এমনই এক ঘটনা সামনে এসেছে মহারাষ্ট্রে। ২ বউয়ের অভিযোগ সত্ত্বেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি করে পুলিশ। পরে সমাজকর্মীদের চাপের মুখে ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে বাধ্য হয় তারা।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৫ সালে। রাজস্থানের বাসিন্দা ২ বোন তখন ২০-র কোটায়। তরুণী ২ মেয়েকে মহারাষ্ট্রের রাভাল পরিবারে বিয়ে দেন তাঁদের বাবা-মা। ২ ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় ২ বোনের। সঞ্জয় রাভালের ছিল ব্যবসা। আর বরুণ রাভাল চার্টার্ড অ্যাকাউন্টান্ট। বিয়ের পর প্রথম ৬ মাস ভাল কাটলেও তারপর থেকে শুরু হয় ওই ২ তরুণীর ওপর অত্যাচার। ক্রমে তা বাড়তে থাকে। সবে বিয়ে হয়ে একটা নতুন পরিবারে নিজেদের মানিয়ে নিতে থাকা ২ বোনের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। ২ ভাই তাদের পরিবারের ওপর চাপ দেয় মোটা অঙ্কের পণ দিতে হবে। তারা নতুন ব্যবসা করতে চায়। সেজন্য টাকা চাই। মধ্যবিত্ত পরিবার তাদের ২ মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শ্বশুরবাড়ির চাহিদামত ৫ লক্ষ টাকা জোগাড় করে তাদের হাতে তুলেও দেয়। কিন্তু তাতে মন ভরেনা রাভাল পরিবারের। তাদের আরও টাকা চাই। আরও ৪ লক্ষ টাকা চেয়ে পাঠায় তারা। সেই টাকা কার্যত জোগাড় করা অসাধ্য হয় ভাসাইয়ের বাসিন্দা রাজস্থানি ওই পরিবারের পক্ষে।
এরপরই ২ বোনের ওপর শুরু হয় অত্যাচার। তাঁদের ২ স্বামী তো বটেই, সঙ্গে অত্যাচারে সামিল হয় তাঁদের শ্বশুর, শাশুড়ি সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। অত্যাচার চরম বাঁক নেয় গত ৩০ অগাস্ট। ওদিন রাভাল পরিবারের সকলে তাদের বাড়ির ২ বউকে নিয়ে হাজির হয় রাজস্থানের পিণ্ডওয়ারা শহরে। অভিযোগ এখানে ২ বোনকে কার্যত বন্দি করে রাখা হয়। সেখানে ১০ দিন ছিলেন তাঁরা। এই ১০ দিনে তাঁদের ঘরে দিন রাত অনেক অচেনা পুরুষ এসেছে গেছে। ওই সব পুরুষদের যৌন লালসার শিকার হতে হয়েছে ২ বোনকে। সেই তালিকায় রাভাল পরিবারের কয়েকজনও ছিল। ১০ দিন ধরে এমন অমানুষিক যৌন লালসা সহ্য করার পর তাঁদের এক ব্যক্তির সঙ্গে ভিরারে তাঁদের বাপের বাড়ি ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
ওই অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে ট্রেনে চেপে বসেন ২ বোন। অভিযোগ ট্রেনে তোলার পর ওই ব্যক্তি তাঁদের মীরা রোডে নিয়ে যাওয়ার কথা জানায়। একরকম জোর করেই। সাফ জানিয়ে দেয়, ওই ২ বোনকে কিনতে সে দেড় লক্ষ টাকা খরচ করেছে। তাই ওই টাকা ওই ২ বোনকে দিয়ে তুলে না নেওয়া পর্যন্ত সে তাঁদের ছাড়বে না। ট্রেনের মধ্যে এমন ঘটনায় সহযাত্রীরাও অবাক হয়ে যান। তাঁদের কয়েকজনের সাহায্যে ওই ব্যক্তির হাত থেকে রেহাই পান ‘বিক্রি’ হয়ে যাওয়া ২ বোন তথা রাভাল পরিবারের ২ বউমা। এরপর ২ বোন ভাসাইতে তাঁরা যেখানে থাকতেন সেখানে এসে প্রতিবেশিদের সব জানান। প্রতিবেশিদের সাহায্যে সমাজকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়।
পুলিশ প্রথমে কিছুতেই ২ বোনের অভিযোগ গ্রহণ করতে চায়নি। পরে পুলিশের ওপর তলায় জানিয়ে সমাজকর্মীরা থানাকে অভিযোগ গ্রহণে কার্যত বাধ্য করেন। ওই ২ বোনের ২ স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি সহ পরিবারের মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।
(সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা)