হায়দরাবাদের ল্যাঙ্গার হাউস এলাকা। এখানেই ভিক্ষা করে জীবনধারণ করতেন রামুলু ও তাঁর স্ত্রী কবিতা। হতদরিদ্র দম্পতির একে অপরের ভরসা হয়ে দিনগুলো যাহোক করে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু এরমধ্যেই কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হন কবিতা। সেই রোগই তাঁর জীবনের শেষ নিঃশ্বাসটুকু কেড়ে নেয় গত শনিবার। এই দুনিয়ায় রামুলুকে একদম একা করে কবিতা চলে যান অন্য জগতে। জীবনের একমাত্র সঙ্গীর এমন অকালে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি রামুলু। পরে কিছুটা সামলে নিয়ে রামুলু ঠিক করেন এখানে নয়, তাঁদের গ্রামেই কবিতার শেষকৃত্য করবেন তিনি। মেডক জেলার মনুর মণ্ডল এলাকায় রামুলুর পৈতৃক গ্রাম। সেখানে দেহ নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন সদ্য স্ত্রীহারা প্রৌঢ়। কিন্তু গাড়ি ভাড়া শুনে তিনি হতবাক। কোনও গাড়ি ৫ হাজার টাকার নিচে যেতে রাজি নয়। ভিক্ষা করে দিন গুজরান করা রামুলুর কাছে অত টাকা কোথায়?
অগত্যা শোকাচ্ছন্ন রামুলু চোখ ভরা জল মুছে ঠেলায় স্ত্রীর দেহ চাপিয়ে পায়ে হেঁটে গ্রামের দিকে রওনা দেন। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। প্রায় ৬০ কিলোমিটার এভাবে আসার পর রামুলু জানতে পারেন মেডক নয়, ভুল রাস্তায় হেঁটে বিকারাবাদের দিকে চলে এসেছেন তিনি। অবসন্ন দেহ, শোকার্ত মন আর সাথ দেয় না। ভুল রাস্তায় আসার কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন রামুলু। বিষয়টা নজরে পড়ে স্থানীয় মানুষজনের। তাঁরাই রামুলুর সব কথা শুনে খবর দেন পুলিশে। পুলিশই তাঁর স্ত্রীর দেহ পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত করে। হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে স্ত্রীর দেহ অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে গ্রামের দিকে রওনা দেন রামুলু। কিছুদিন আগে ওড়িশার দানা মাঝির কথা কেউ ভোলেননি। অনেক অনুনয় বিনয় করেও একটা অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে স্ত্রীর দেহ কাঁধে চাপিয়ে মেয়ের হাত ধরে গ্রামের পথে হাঁটতে শুরু করেছিলেন তিনি। পরে তা দেখে ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। রামুলুর ঘটনা তার অন্যথা নয়। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? দারিদ্রের এই পরিহাস এভাবে আর কতদিন সহ্য করতে হবে দানা মাঝি, রামুলুদের?