National

আশ্চর্য রক্ষা, ৫ দিন আটকে থেকেও বেঁচে গেল ৭ বছরের বালিকা

কথায় বলে রাখে হরি মারে কে! সে কথাটা ফের একবার যেন সত্যি হল! প্রতিবেশির বাথরুমে ৫ দিন কোনও খাবার ছাড়া আটকা পড়ে থেকেও বেঁচে গেল দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাঠরতা এক ৭ বছরের বালিকা। সারা শহর, এমনকি আশপাশের বিভিন্ন জেলাতে তার খোঁজ হলেও সকলের অজান্তে সে পড়ে রইল পাশের বাড়ির বাথরুমে। এমনই এক চমকে দেওয়ার মত ঘটনায় তোলপাড় পড়ে গেছে তেলেঙ্গানায়। সকলের মুখে মুখে ঘুরছে এই কাহিনি।

পুলিশ জানাচ্ছে, গত ২০ এপ্রিল বাড়ির ছাদে খেলা করছিল অখিলা নামে ওই ছোট্ট মেয়েটা। বাবা-মায়ের সঙ্গে ওই বাড়িতে ভাড়া থাকে সে। বাড়ির ছাদ লাগোয়া পাশের বাড়ি। পাশের বাড়ির একটা বাথরুম ওপর থেকে খোলা। ওই বাথরুমটি ব্যবহার করতেন ওখানে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকা এক শিক্ষক। তিনি তখন বাড়ি ছিলেন না। গিয়েছিলেন হায়দরাবাদে। সেখানেই তাঁর পরিবার থাকে। স্কুলে চাকরি করতে এখানে তিনি একাই থাকতেন। স্কুল ছুটি থাকায় পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ভাড়ার ঘর বন্ধ করে তিনি চলে গিয়েছিলেন। ফলে তাঁর বাথরুমও তালা দেওয়া ছিল।


খেলতে খেলতে অখিলা কোনওভাবে ছাদ থেকে ওই বাথরুমের ওপর পড়ে। বাথরুমের মাথা খোলা। সেখানে দড়ি দিয়ে অনেক কাপড় মেলা ছিল। পড়ার সময় অখিলা সেই দড়ি আর কাপড়ে জড়িয়ে বাথরুমের মধ্যে পড়ে। ফলে তার বড় ধরনের আঘাত লাগেনি। বাথরুমটি এমন জায়গায় যেখান থেকে চেঁচালেও সহজে আশপাশের লোকজন শুনতে পাবেন না। ফলে পুলিশ ধরে নিচ্ছে বাথরুমে পড়ার পর অখিলার কান্না বা উদ্ধারের জন্য আর্তি কেউ শুনতে পাননি। এদিকে বাথরুমের দরজাও বন্ধ। ফলে সেখান থেকে সে বারও হতে পারেনি। বাথরুমেই আটকা পড়ে অখিলা। সেখানে জল ছাড়া আর কিছুই ছিলনা তার জন্য।

সেদিন সারা মহল্লা তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখার পর অখিলার বাবা-মা পরদিন পুলিশে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। বাড়ির কাছেই একটা মেলা চলছে। তাঁদের ধারণা হয় সেই মেলাতেই হয়তো কাউকে না বলে চলে গিয়েছিল মেয়ে। আর সেখান থেকেই সে নিখোঁজ হয়েছে। পুলিশ এলাকায় তল্লাশির পাশাপাশি আশপাশের পুলিশ স্টেশনে খবর দেয়। এমনকি আশপাশের জেলাগুলিকেও সতর্ক করা হয়। কিন্তু দিন পেরিয়ে রাত হয়। রাত পেরিয়ে আবার দিন। কিন্তু অখিলার কোনও হদিস পুলিশ পায়নি।


গত ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পরিবারের সঙ্গে দেখা সেরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাড়ি ফিরে আসেন ওই শিক্ষক। তিনি এসে ঘর খোলেন। তারপর বাথরুম খুলতেই আঁতকে ওঠেন তিনি। বাথরুমের মধ্যে পড়ে আছে এক বালিকা। দ্রুত প্রতিবেশিদের খবর দেন ওই শিক্ষক। প্রতিবেশিরা এসে অখিলাকে চিনতে পারেন। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। অচেতন অবস্থায় অখিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখনও তার দেহে প্রাণের স্পন্দন ছিল।

হাসপাতালে স্যালাইন চালু হয়। তার চিকিৎসাও চালু হয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন অখিলা খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এদিকে এমন এক আশ্চর্য রক্ষা নিয়ে রীতিমত চর্চা শুরু হয়েছে তেলেঙ্গানায়। তেলেঙ্গানার নারায়ণপেট জেলার মাখতাল শহরে ঘটা এই ঘটনা এখন মুখে মুখে ঘুরছে। কোনও খাবার ছাড়া রাত দিন এক করে একটা ছোট্ট বাথরুমের মধ্যে কেবল জল খেয়ে এক বালিকার বেঁচে যাওয়ার ঘটনায় অখিলার বাবা-মা তো বটেই বহু সাধারণ মানুষও ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন।

(সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা)

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button