নেহাতই একটা টিউবওয়েলের জল। কিন্তু সেই জলেই নাকি যাদু আছে! এ জল খাওয়া মানেই সব রোগ থেকে মুক্তি। এমনকি ডায়াবেটিসের মত রোগও নাকি এই জল পেটে পড়লেই পাততাড়ি গুটিয়ে ভ্যানিস হয়ে যাচ্ছে। এমন জল কী ছাড়া যায়! শেষ হয়ে গেলে তো সারা জীবন পস্তাতে হবে! তাই যত কষ্টই হোক এ জল ছাড়া নেই। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ হাজির হচ্ছেন এখানে। আর ছুটির দিন তো সেই সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়াচ্ছে। এমনই এক জল নিয়ে এখন হুড়োহুড়ি পড়েছে হরিয়ানার রেওয়ারি জেলার গুজরিওয়াস গ্রামে।
গুজরিওয়াস গ্রামেই রয়েছে জতীন্দর নামে এক ব্যক্তির একটি ফার্মহাউস। সেখানেই রয়েছে একটি টিউবওয়েল। সেখান থেকেই কদিন আগে ২-৪ জন মানুষ জল নিয়েছিলেন। সেই জল পান করে নাকি তাঁদের ডায়াবেটিস, চামড়ার সমস্যা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যায়। সেকথা ক্রমে সোশ্যাল মিডিয়া মারফত ছড়াতে থাকে। তারপরই ক্রমে বাড়তে থাকে ভিড়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ওই টিউবওয়েল থেকে জল নিতে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। হরিয়ানা তো বটেই এমনকি দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান ও পঞ্জাব থেকেও মানুষ কষ্ট করে হাজির হতে থাকেন এখানে।
কারও মতে, তাঁর নাকি অস্টিও আর্থারাইটিস সেরেছে, কেউ দাবি করছেন তাঁর স্ত্রীয়ের ব্লাড সুগার কমেছে। অনেকে তো একাধিকবার এখানে হাজির হয়েছেন জল সংগ্রহ করতে। আর এই চাহিদা মাথায় রেখে এখন এই গ্রামে রীতিমত হাট বসেছে। মিডিয়া দাঁড়িয়ে আছে লাইন দিয়ে। কভার করছে। টিউবওয়েলের আশপাশে পরপর দোকান তৈরি হয়েছে। সেখানে বালতি থেকে প্লাস্টিকের বোতল সবই বিকোচ্ছে। জল নিয়ে যাওয়ার জন্য যেগুলি দরকার পড়ে। সব কাজ ফেলে ফার্মহাউসের মালিক জতীন্দরের কাজ হয়েছে সকাল ৭টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত টিউবওয়েলের জল বিলি করা। তিনি দাবি করেছেন এই জল তিনি বিনামূল্যেই সকলকে দিচ্ছেন। কিন্তু এখানে আবার এক টিভি মিডিয়া নাকি ভিডিও তুলেছে যে জতীন্দর নাকি লুকিয়ে বালতি পিছু ১০ টাকা করে নিচ্ছেন। সেটাও এখন স্টোরি!
যে জল নিয়ে এত কাণ্ড সেই জল নিয়ে কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন উল্টো কথাই বলছে। প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে ওই জল মানুষের পান করাই উচিত নয়। মানুষের পান করার অযোগ্য ওই জল। কারণ জলে নুন এবং খনিজের পরিমাণ অত্যধিক। ফলে তা শরীরের পক্ষে খারাপ। বিশেষত রক্তচাপের রোগীদের তো এই জল একেবারেই চলবে না। প্রশাসনিক আধিকারিকরা তো এ নিয়ে রীতিমত বোর্ড তৈরি করে ফেলেছেন। জলের সব ধরনের নমুনা পরীক্ষার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন তাঁরা। কিন্তু প্রশাসন তার মতো যাই করুক না কেন সেসবে কার্যত কর্ণপাত করছেন না কেউ। বরং জল সংগ্রহে ভিড় প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা