National

মায়ের কান্নায় ঈশ্বরের মিরাকল, সৎকারে যাওয়ার পথে প্রাণ ফিরে পেলেন যুবক

একেই হয়তো বলে মিরাকল! চমৎকার! এ পৃথিবীতে কিনা হয়। চিকিৎসকেরা জবাব দেওয়ার পরও মানুষ যমের হাত ছাড়িয়ে ফিরে আসেন। যেমনটা ঘটল গন্ধম কিরণের ক্ষেত্রে। ১৮ বছরের তরতাজা যুবকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য মরার খাট, ফুল, ধূপ সবই এনে ফেলেছিলেন আত্মীয়, বন্ধুরা। গোটা বাড়িতে কান্নার রোল। প্রায় সকলের চোখেই জল। দেহ সৎকারের জন্য পোড়ানোর কাঠও আনা হয়ে গেছে। অন্ত্যেষ্টি তখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এদিকে যুবকের মা জানতেন না তাঁর ছোট ছেলের সৎকারের বন্দোবস্ত হচ্ছে। তাঁকে ইচ্ছে করেই খবরটা দেননি আত্মীয়রা। এ শোক হয়তো তিনি সহ্য করতে পারবেন না, এই ভয়ে। কিন্তু বাড়ি ফিরে কিরণের মা সব দেখে শুনে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। সে কান্না সহ্য করতে পারছিলেননা আত্মীয়রা। ঈশ্বরকে এক টানা ডেকে চলেছিলেন কিরণের মা গন্ধম সাইদাম্মা। এদিকে অন্ত্যেষ্টির তোরজোড় সব সম্পূর্ণ। এমন সময় কয়েকজনের নজর কাড়ল একটি অবাক করা বিষয়।

কিরণের আত্মীয়দের কয়েকজন দেখলেন কিরণের চোখ থেকে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। চমকে উঠলেন সকলে। যে ছেলের ব্রেন ডেথ হয়ে গেছে। যাঁকে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে অবশেষে জানিয়েছেন আর কিছুই করার নেই। কিরণ আর কয়েক ঘণ্টা বাঁচবেন। তাই হাসপাতালে না রেখে শেষ সময়টা বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তাঁরা। ভেন্টিলেশন থেকে বার করে আনা হয় কিরণকে। সব যন্ত্রপাতি খুলে দেওয়া হয়। কেবল একটি অক্সিজেন মাস্ক মুখে পরিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বাড়িতে। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার পর তাই অন্ত্যেষ্টির তোরজোড় শুরু করে দেন আত্মীয়রা। যা করতেই হবে, তাতে আর দেরি করে লাভ কি!


সেই পরিস্থিতিতে কিরণের চোখের জল দেখে সকলে ছোটেন স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে। তিনি এসে পরীক্ষা করে দেখেন কিরণের খুব ক্ষীণ পালস পাওয়া যাচ্ছে। তখনই তিনি নিজেই হাসপাতালে যে চিকিৎসকের অধীনে কিরণ ছিলেন তাঁকে যোগাযোগ করেন। শুরু হয় ইনঞ্জেকশন। ফের তাঁকে হাসপাতালে ফেরানো হয়। সেখানে নতুন করে চিকিৎসকেরা আশার আলো পেয়ে লড়াই শুরু করেন। ৩ দিন পর কিরণের জ্ঞান ফেরে। খুব অল্প হলেও তিনি মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এরপর তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন আর ভয় নেই। কিরণ বাড়ি ফিরে আসেন। এখন তরল পদার্থ নিজেই খাচ্ছেন তিনি।

গত ২৬ জুন বমি ও মলত্যাগের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তেলেঙ্গানার সূর্যপুট জেলার পিল্লালামারি গ্রামের বাসিন্দা কিরণ। বিএসসি-র ছাত্র কিরণের ডেঙ্গি ও সাইরিয়া একসঙ্গে ধরা পড়ে। চিকিৎসা শুরু হয়। তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। গত ৩ জুলাই চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন আর কিছুই করার নেই। কিরণ আর কয়েক ঘণ্টার অতিথি। তাঁর ভেন্টিলেশন খুলে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিরণরা ২ ভাই। বাবা খুব ছোট বয়সেই মারা যান। তারপর তাঁদের মা শ্রমিকের কাজ করে ২ জনকে বড় করে তোলেন। সেই কঠিন লড়াই করে ২ ছেলেকে বড় করে তোলা মা গন্ধম সাইদাম্মা বিশ্বাস করেন ঈশ্বর তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর ছেলেকে ফের তাঁর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা


Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button