National

রাখির আগে ভাই-বোনের মধ্যে প্রবল গুলির লড়াই

একদিকে পজিশন নিয়েছেন দাদা। উল্টোদিকে তাঁর দিকে তাক করে গুলি ছুঁড়ছে বোন। দাদাও পাল্টা গুলি চালাচ্ছেন। মরণপণ লড়াই। রাখির ঠিক আগেই ভাই-বোনের এমনই ভয়ংকর গুলির লড়াইয়ের সাক্ষী হয়েছিল ছত্তিসগড়ের সুকমা। গুলির লড়াইয়ের পর বোন পালিয়ে যায় গহন জঙ্গলে। বোনকে হাতে পেয়েও হাতছাড়া হওয়ায় আক্ষেপ রয়ে গেল দাদার। বোনকে গুলিতে কুপোকাত করা অথবা গ্রেফতার করার কোনওটাই করতে না পেরে নিজের ওপরই ক্ষুব্ধ দাদা। ভাইয়ের হাতে রাখি পড়াতে যখন গোটা দেশের বোনেরা মুখিয়ে আছেন, তখনই এমন এক ঘটনা সামনে আনল পুলিশ।

পুলিশ জানাচ্ছে, ঘটনাটি ঘটে গত ২৯ জুলাই। ওদিন সুকমার গভীর জঙ্গলে মাওবাদীদের ট্রেনিং চলছিল। ফলে গুলির শব্দ হচ্ছিল। অন্যদিকে পুলিশের কাছে খবর পৌঁছয় সেখানে বেশ কয়েকজন মাওবাদী এই ট্রেনিংকে কেন্দ্র করে জড়ো হয়েছে। পুলিশ সেখানে হাজির হয়। পুলিশকে যিনি রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট কনস্টেবল ভেত্তি রামা। রামার এ জঙ্গল নখদর্পণে। কারণ তিনি নিজেই একজন মাওবাদী ছিলেন।


২৩ বছর মাওবাদী হিসাবে এই জঙ্গলে কাটিয়েছেন। একা নয়। সঙ্গে ছিল তাঁর বোন ভেত্তি কান্নি। এই জঙ্গলেরই একটি গ্রামের বাসিন্দা রামার যখন ১০ বছরের মত বয়স, তখন ভাই-বোনকে নিয়ে যায় মাওবাদীরা। তারপর থেকে তারা মাওবাদী। ২০১৮ সালে মাওবাদী জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন রামা। এদিকে তখন তাঁর মাথার দাম ৮ লক্ষ টাকা। সেই ওয়ান্টেড মাওবাদী রামা আত্মসমর্পণ করেন পুলিশের কাছে। পুলিশ তাঁকে নতুন জীবন দিতে পুলিশের চাকরি দেয়। তারপর থেকে এই জঙ্গলে যখনই পুলিশ হাজির হয় তখন রাস্তা চেনান রামাই। যেমনটা তিনি করেছিলেন গত ২৯ জুলাই।

পুলিশ যখন রামার দেখানো রাস্তা দিয়ে জঙ্গলের মধ্যে মাওবাদী আস্তানার কাছে পৌঁছয় তখন পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে মাওবাদীরা। সেই দলে যে তাঁর বোন কান্নিও রয়েছে তা পুলিশের একজন রামাকে জানিয়ে দেন। রামা দেখেন তাঁর বোন একটি ঝোপের পিছনে লুকিয়ে গুলি চালাচ্ছে। বোনকে আত্মসমর্পণ করার জন্য হাঁক দেন রামা। কিন্তু দাদার সে ডাককে অগ্রাহ্য করেই গুলি চালাতে থাকে সে। পাল্টা বাধ্য হয়ে গুলি চালান রামা। ভাই-বোনে গুলির লড়াই শুরু হয়।


বেশ কিছুক্ষণ এমন চলার পর এক সময়ে গহন অরণ্যে চম্পট দেয় কান্নি। পুলিশ-মাওবাদী ওই গুলির লড়াইয়ে ২ মাওবাদীর মৃত্যু হয়। এদিকে বোনকে এতদিন পরে এক ঝলক দেখতে পেলেও তাকে কাছে পেলেন না দাদা। সে হারিয়ে গেল গভীর জঙ্গলে, নিজের জগতে। পড়ে রইল শুধু একে অপরকে তাক করে ছোঁড়া কিছু গুলির খোল। এবারও বোনের কাছে রাখি পড়া হল না দাদার। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button