২৭ বছর ধরে স্ত্রীর চিতাভস্ম আঁকড়ে বেঁচে আছেন ৮৭ বছরের বৃদ্ধ
রক্ত মাংসের মানুষের মৃত্যু হতে পারে, কিন্তু সত্যিকার প্রেমের মৃত্যু নেই। সে অমর হয়ে থাকে। এমনই এক অমর প্রেমের কাহিনি বাস্তব জীবনে বয়ে বেড়াচ্ছেন ভোনালাথ।
রক্ত মাংসের মানুষের মৃত্যু হতে পারে, কিন্তু সত্যিকার প্রেমের মৃত্যু নেই। সে অমর হয়ে থাকে। এমনই এক অমর প্রেমের কাহিনি বাস্তব জীবনে বয়ে বেড়াচ্ছেন ৮৭ বছরের বৃদ্ধ ভোনালাথ অলোক। স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে ২৭ বছর হল। তবু স্ত্রীকে ভুলতে পারেননি তিনি। স্ত্রী পদ্মার শেষ স্মৃতি হিসাবে রেখে দিয়েছেন তাঁর চিতাভস্ম। যত্ন করে। বাড়ির সকলকে বলেছেন তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর চিতায় যেন স্ত্রী পদ্মার চিতাভস্ম দিয়ে দেওয়া হয়। একসঙ্গে বাঁচা হয়তো হল না, কিন্তু একসঙ্গে শেষ হবে তাঁদের জীবন। তাঁদের স্মৃতি। হয়তো এভাবেই পরলোকে ফের দেখা হয়ে যাবে পদ্মার সঙ্গে। ফের স্ত্রীকে পাশে নিয়ে প্রতি মুহুর্ত সেখানে বড় আনন্দে কাটাতে পারবেন তিনি।
ভোলানাথের সঙ্গে পদ্মার বিয়ে হয় খুব কম বয়সে। একদম তরুণ দুটি প্রাণ একে অপরকে এতটাই ভালবাসতেন যে দুজনেই কথা দিয়েছিলেন তাঁরা একসঙ্গে এভাবেই বাঁচবেন। একসঙ্গেই মরবেন। সাত জন্মের বন্ধন তাঁদের এমনই অটুট থাকবে। বেশ চলছিল ভোলানাথ আর পদ্মার প্রেম, ভালবাসা, সংসার। একটা সময়ের পর সন্তানের জন্ম দেন পদ্মা। সংসারে নতুন অতিথি আসে। সেই সুখের সংসারে হঠাৎই একদিন অসুস্থ হন পদ্মা। বড় কঠিন অসুখ। বড় চিকিৎসক দেখান ভোলানাথ। কিন্তু সব চেষ্টা বিফল করে ভোলানাথকে রেখে পরলোকে পাড়ি দেন পদ্মা।
অকালে পদ্মাকে হারিয়ে ভোলানাথ পড়ে থাকেন একা। মৃত্যুর ওপর কারও হাত নেই। তাই ভোলানাথ ঠিক করেন পদ্মাকে তিনি কিছুতেই তাঁর কাছ ছাড়া করবেন না। স্ত্রীর চিতাভস্ম তিনি একটি পাত্রে পুরে নেন। সেই ধাতব পাত্রকে প্লাস্টিকে মুড়ে, তার ওপর কাপড় বেঁধে রেখে দেন নিজের কাছে।
মা হারানো সন্তানের দায়িত্ব বর্তায় ভোলানাথের ওপরই। যদিও তাঁরা তখন যথেষ্ট বড়। তবু মা ও বাবা, ২ জনের ভূমিকাই পালন করতে হয় তাঁকে। এরপর সময় নিজের মত গড়াতে তাকে। কিন্তু ভোলানাথের ভালবাসা এতটুকুও চিড় খায়নি। নিভৃতে তিনি প্রতিদিন নিজের বাড়ি লাগোয়া জমিতে একাকী বসে স্ত্রীর কথা ভাবেন।
যখনই পরিবারে কোনও সমস্যা আসে ভোলানাথ স্ত্রীর চিতাভস্মের সামনে বসে রাস্তা খোঁজেন। তাঁর মনে হয় পদ্মা তাঁর আশপাশেই রয়েছেন। তাঁকে সঠিক পথের সন্ধান দেন তিনি। নিশ্চিন্ত হন ভোলানাথ।
এভাবেই ২৭টা বছর পার করে ফেলেছেন ভোলানাথ। তাঁর মতে, ওই চিতাভস্মের দিকে চেয়ে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহুর্ত আজও মনে পড়ে। মাঝেমধ্যেই ভোলানাথ বাড়ির আমগাছের ডালে স্ত্রীর চিতাভস্মের ওই পুটুলিটা ঝুলিয়ে রাখেন। আর সেদিকে একমনে চেয়ে একটা বড় সময় কাটিয়ে দেন।
একসঙ্গে বাঁচা-মরার যে শপথ তাঁরা করেছিলেন, অভিমানী ভোলানাথ মনে করেন স্ত্রী সে কথা রাখেননি। তাঁকে একা ফেলেই চলে গেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর পরলোকে গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলে ভোলানাথ ঠিক করেছেন স্ত্রীকে বলবেন যে তিনি কিন্তু তাঁর কথা রেখেছেন। স্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে এখনও ভোলানাথের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে জল। হয়তো অজান্তেই। তাঁর আশপাশের মানুষ কিন্তু জানেন সেই জলে কত প্রেম লুকিয়ে আছে নিভৃতে। কতটা ভাল না বাসলে আজও বৃদ্ধ ভোলানাথের গাল বেয়ে চিবুক ভাসায় অশ্রুধারা? — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা