এমন অনেকের সঙ্গেই তাদের বিছানায় শুতে বাধ্য করা হয়েছে যারা তাদের বাবার বয়সী। এরা প্রত্যেকেই কলেজ পড়ুয়া। সাধারণত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা তরুণীদের টার্গেট করে তোলা হত। তাদের বাধ্য করা হত ভিআইপিদের সঙ্গে বিছানায় শুতে। এমনই ভয়ংকর স্বীকারোক্তি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা এসআইটি-র কাছে দিয়েছে এই চক্রের মাথা শ্বেতা জৈন। মধ্যপ্রদেশের হানি ট্র্যাপের জাল সাজিয়ে ভিআইপিদের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করার এই চক্র চলছিল। কলেজ পড়ুয়া তরুণীদের কাজে লাগিয়ে এভাবেই বিভিন্ন কাজ ঘুরপথে করিয়ে নেওয়া হত। সংবাদ সংস্থা আইএএনএস-এর অন্তর্তদন্তে এই নির্মম সত্য সামনে এসেছে।
তরুণীদের এভাবে কাজে লাগিয়ে হানি ট্র্যাপ তৈরি করে কী ধরনের কাজ করানো হত? সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, শ্বেতা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে তারা এভাবে কোটি কোটি টাকার সরকারি বরাত জোগাড় করত। সেই বরাত বড় বড় সংস্থাকেই পাইয়ে দেওয়া হত। যা শ্বেতা এবং তার সহযোগী আরতি দয়াল কমিশন ভিত্তিতে করত। এমনকি আইএএস, আইপিএস-দের ভাল জায়গায় পোস্টিংয়েরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হত এইভাবে।
শ্বেতা জৈন সিট-এর কাছে দাবি করেছে যে কলেজ পড়ুয়া তরুণীদের বিছানায় নিয়ে যাওয়ার আবদার আমলাদের কাছ থেকেই আসত। প্রসঙ্গত ইতিমধ্যেই এই কাণ্ডে ১২ জন আমলা ও ৮ জন প্রাক্তন মন্ত্রীর নাম উঠে এসেছে। যাঁরা এখন কার্যত মুখ লুকোনোর জায়গা পাচ্ছেন না। এক কলেজ পড়ুয়া সিটকে জানিয়েছেন যে তাঁকে ভাল কলেজে অ্যাডমিশন করানোর নাম করে ভোপালে নিয়ে গিয়ে ৩ সচিব পর্যায়ের আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করায় শ্বেতা। তাঁকে একটি অডি গাড়িও দিয়ে দেওয়া হয় যাতে তিনি ইন্দোর ও ভোপালের মধ্যে যাতায়াত করতে পারেন। বদলে তাঁকে ভিআইপিদের সঙ্গে বিছানায় শুতে হবে।
ওই তরুণী জানিয়েছেন তিনি প্রথমে রাজি হননি। বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু তাঁর বাড়িতে হাজির হয় শ্বেতার সহযোগী আরতি। এসে তাঁর বাবাকে বোঝায় আরতির এনজিও ওই তরুণীর পড়ার খরচ বহন করবে। তারপর তাঁর পরিবারকে রাজি করিয়ে তাঁকে নিয়ে আরতি ও অন্য একজন হাজির হয় ইন্দোরের একটি বিলাসবহুল হোটেলে। সেখানেই তাঁকে রাখা হয়। তার আগে তাঁকে একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়েছিল। যেখানে শ্বেতাকে এক আমলার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে দেখা যায়। ওই তরুণীর দাবি তাঁকে এই কাজ করতে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা হয়।
পরদিন সন্ধেয় ওই হোটেলে এক সরকারি ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে তাঁর পরিচয় করানো হয়। ৬০ বছর বয়স্ক ওই ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে তাঁকে হোটেলের ঘরে রাত কাটাতে হয়। ওই ব্যক্তির যৌন লালসার শিকার হতে হয়। যার ভিডিও আবার তুলে রাখে শ্বেতা, আরতিরা। সেই ছবি দেখিয়ে ওই ইঞ্জিনিয়ারকে পরে ব্ল্যাকমেলও করা হয়। অন্যদিকে ওই তরুণীকেও শ্বেতারা ভয় দেখায় যে যদি এসব ঘটনার কথা সে বাইরে কাউকে জানায় বা পরিবারকে জানায় তবে তাঁর এই ভিডিও ইন্টারনেটে আপলোড করে দেওয়া হবে।
সিট-এর অন্যতম সদস্য ইন্দোরের এসএসপি জানিয়েছেন, মূলত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের বিলাসবহুল জীবন, গ্ল্যামারের হাতছানি দিয়ে এই জালে জড়াত শ্বেতা ও আরতি। তারপর তাঁদের দিয়ে এসব কাজ করানো হত। এ কাজে জন্য কলেজ পড়ুয়াদের একটা ভাল টাকাও দিত তারা। এই কাজে কলেজ পড়ুয়া ছাড়াও ৪০ জন কলগার্লকে কাজে লাগাত শ্বেতারা। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা