খান কতক গ্রাম। পানকি পাডাও, জামুই, বাদুয়াপুর সরাইমীরা এমনই কয়েকটি গ্রাম। কানপুরের আশপাশে। এসব গ্রামে গত ৫ বছরে কোনও সানাই বাজেনি। বিয়ের আনন্দ কাকে বলে ভুলেই গিয়েছেন এখানকার মানুষজন। গ্রামে যুবকের অভাব নেই। কিন্তু কেউ এঁদের মেয়ে দিতে রাজি নন। এখানকার ছেলেরা এখন প্রায় হালই ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁদের আর বিয়ে হবে না বলেই ধরে নিয়েছেন তাঁরা। যদিওবা দূর গ্রামের কেউ রাজি হচ্ছেনও মেয়ে দিতে। তো খোঁজখবর করার পর তাঁরাও বিয়ে ভেঙে দিচ্ছেন। ফলে একটা চরম হতাশা পেয়ে বসেছে গ্রামের যুবাদের মধ্যে।
কিন্তু কেন এমন হাল? স্বচ্ছ ভারত অভিযান সারা দেশ জুড়ে প্রচারের আলো পেলেও এসব গ্রাম স্বচ্ছতার আলো থেকে এখনও অনেক দূরে। এখানে জঞ্জাল সাফাই দুরস্ত, এক একটা জলাশয়ও ভরা হয়ে যাচ্ছে জঞ্জালের স্তূপে। গ্রামের প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই কেউ না কেউ অসুস্থ। গ্রামের যুবারা অসুস্থ। অতিরিক্ত জঞ্জালের কারণে গ্রামগুলি দূষণের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। জঞ্জাল দিনের পর দিন জমেই চলেছে। তার সাফাই হয়না। গ্রামের পরিবেশ যা তাতে যে ওখানে থাকতে যাবেন তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়তে বাধ্য। ফলে কেউই ওই পরিবেশে মেয়ের বিয়ে দিতে চান না। পাশাপাশি যাঁর সাথে বিয়েটা হবে সেই তরুণ প্রজন্মও নানা ধরনের অসুস্থতায় আক্রান্ত। যা তাঁদের গ্রামের দূষণের কারণেই তৈরি হচ্ছে।
এসব গ্রামে হাঁপানি আর টিবি রোগ ঘরে ঘরে। এ গ্রামে যদিও কেউ সব বাধা টপকে কোনওভাবে বিয়ে করে স্ত্রীকে ঘরে নিয়ে এসেছেনও, তো তাঁকে ছেড়ে স্ত্রী কদিনের মধ্যেই শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। গ্রামের মানুষের আক্ষেপ গত ৫ বছরে এসব গ্রামে সানাই বাজেনি। কোনও পরিবারে বিয়ের আনন্দ হয়নি। গ্রামে কোনও মেয়ে বিয়ে হয়ে আসেনি। এসব গ্রামের এমন দশা বিগত ৫ বছরে ভয়ংকর চেহারা নিয়েছে। একটা পুকুরে আগে জল ছিল। সেখানে গত ৫ বছরে এত ময়লা ফেলা হয়েছে যে তা এখন একটা ভ্যাটে রূপান্তরিত হয়েছে। আর সেখান থেকে দুর্গন্ধের পাশাপাশি ছড়াচ্ছে নানা ধরনের অসুখবিসুখ।
এতকিছু হচ্ছে অথচ প্রশাসন নির্বিকার? ঠিক তা নয়। আসলে এসব গ্রামের চারধারে রয়েছে কানপুর পুরসভার ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট পয়েন্ট। ফলে কানপুর শহরের যত জঞ্জাল তা সেখানে জড়ো হয়। যা থেকে প্রতিদিন দূষণে জর্জরিত হচ্ছে গ্রামগুলি। অথচ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট পয়েন্ট এখানেই থাকায় প্রতিদিন শহরের সব জঞ্জাল জড়ো করে এখানে ফেলা হয়েই চলেছে। যদিও গ্রামবাসীদের দুর্দশার কথা বিবেচনা করে এখান থেকে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্টগুলিকে অন্যত্র সরানোর পরিকল্পনা করেছে কানপুর পুরসভা। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা