রাত তখন ১২টা। নির্ভয়া কাণ্ডের ৪ মৃত্যু দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত অক্ষয় ঠাকুর, মুকেশ সিং, পবন গুপ্তা ও বিনয় শর্মা নিজের নিজের সেলে চুপ করে বসে। এই সময় মেরঠ থেকে আসা পবন জল্লাদকে প্রথম দেখানো হয় এই ৪ জনের মুখ। পবন জল্লাদ এদের ৪ জনকে দেখে যাওয়ার পর অক্ষয় ঠাকুর উঠে এসে জিজ্ঞেস করে কে এই ব্যক্তি। তিহার জেলে কর্মরতরা জানান তিনিও জেলেরই একজন কর্মী। পবন জল্লাদকে জেলের কর্মী হিসাবেই পরিচয় দেন তাঁরা। এরপর অক্ষয় ঠাকুর বাকি ৩ জনের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চায়। কিন্তু সেই অনুমতি তাকে দেওয়া হয়নি। কাউকেই কারও সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি জেল কর্তৃপক্ষ।
তিহার জেলের ডিরেক্টর জেনারেল জানান, ভোর সাড়ে ৫টায় ছিল ফাঁসির সময়। তার আগে ৪ জনের কেউই রাতে ঘুমোতে পারেনি। এদিকে তখন সুপ্রিম কোর্টে মধ্যরাতেই চলছিল তাদের ফাঁসি স্থগিত করার শেষে চেষ্টা। রাত সাড়ে ৩টেয় সুপ্রিম কোর্ট পরিস্কার করে দেয় এদের ফাঁসিতে কোনও বাধা নেই। রাতে তখন জেলের বাইরে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে প্যারামিলিটারি ফোর্স। ভোর ৪টেয় অ্যাসিট্যান্ট জেলার এই ৪ জনকে স্নান করে নিতে বলেন। তবে কেউ স্নান করেনি।
সওয়া ৪টেয় স্নানের পর ৪ জনের কাছেই জানতে চাওয়া হয় তারা কোনও ধর্মগ্রন্থ পড়তে চায় কিনা। কিন্তু ৪ জনই জানিয়ে দেয় তারা কিছু পড়তে চায়না। এরপর তাদের ৪ জনকে তাদের জীবনের শেষ ব্রেকফাস্ট খেতে দেওয়া হয়। যা তারা কেউই মুখে তোলেনি। ভোর সাড়ে ৪টেয় তাদের হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে যেখানে তাদের ফাঁসি হবে। তিহার জেলে যা ‘ফাঁসি কোঠি’ নামে পরিচিত। তার আগে অবশ্য তাদের শারীরিক পরীক্ষা হয়। যেখানে তাদের পরীক্ষার পর জানিয়ে দেওয়া হয় তারা ফাঁসির জন্য শারীরিকভাবে সক্ষম।
৪ জনকে ফাঁসি কোঠি-তে নিয়ে যাওয়ার পর জেল সুপার ফের একবার দেখে নেন যে শেষ মুহুর্তেও কোনও ফাঁসি রদের নোটিস এসেছে কিনা। তা না আসায় ভোর ৫টা ২০ নাগাদ তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। হাত পিছমোড়া করে বেঁধে দেওয়া হয়। এই সময় কারাগারে বন্দিদের তাদের সেল থেকে বার হতে মানা করা হয়। ৫টা ২৫ মিনিটে ফাঁসি কোঠি-তে উপস্থিত জেলাশাসক ৪ জনের কাছে জানতে চান তাদের শেষ ইচ্ছা। কিন্তু কেউই তাদের কোনও শেষ ইচ্ছার কথা জানায়নি। এরপর ডিএম ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট-এ সই করে দেন।
সইয়ের পর তাদের ফাঁসি কাঠে দাঁড় করানো হয়। জল্লাদ তাদের গলায় ফাঁসির দড়ি লাগিয়ে দেন। পা বেঁধে দেন। জেল সুপার এরপর অনুমতি দিলে জল্লাদ লিভার টেনে দেন। আধ ঘণ্টা পর ৪ জনের দেহ পরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরা। জানিয়ে দেন সকলেই মৃত। পুরোটাই সংবাদ সংস্থা আইএএনএস তাদের সূত্র মারফত জানতে পারে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা