টানা ১৫ দিন রিকশা চালিয়েও বাড়ি এখনও অনেক দূর
লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা এক অধ্যায়ের রূপ নিয়েছে। চরম কষ্ট সহ্য করে তাঁদের বাড়ি ফেরার লড়াই এক একটা কাহিনির জন্ম দিচ্ছে প্রতিদিন।
কাজের টানে, রোজগারের তাগিদে দেশের বহু মানুষ ঘর, পরিবার ছেড়ে অন্য রাজ্যে ছুটে যান। কিন্তু লকডাউনে তাঁদের সেই অন্য রাজ্যে চরম দুরবস্থার শিকার হতে হচ্ছে। অনেকেরই পকেটে টাকাকড়ি প্রায় নেই। দীর্ঘদিন লকডাউনে কাজকর্ম না থাকায় তাঁরা সমস্যায়। ফিরতে চাইছেন বাড়িতে। কিন্তু সে উপায়ও নেই।
এখন শ্রমিক স্পেশাল চালু হয়ে একাংশের পরিযায়ী শ্রমিকদের অবশ্য কিছুটা উপকার হয়েছে। এমনই এক পরিযায়ী শ্রমিক গোবিন্দ মণ্ডল। দিল্লির একটি গ্যারাজে কাজ করতেন তিনি। কিন্তু লকডাউনে সে কাজ গেছে। মালদার বাসিন্দা গোবিন্দ এরপর চরম কষ্ট সহ্য করেই দিল্লিতে ছিলেন। ভরসা ছিল একটাই, কাজ হারালেও মালিক তাঁকে তাঁর প্রাপ্য ১৬ হাজার টাকা মিটিয়ে দিয়েছিলেন।
ওই টাকার ভরসায় দিল্লিতে লকডাউনের একটা একটা করে দিন কাটাচ্ছিলেন গোবিন্দ। কিন্তু সে পুঁজিও শেষ হতে থাকে। তখন আর মাত্র ৫ হাজার টাকা পড়েছিল হাতে। এই অবস্থায় গোবিন্দ স্থির করেন আর দিল্লিতে নয়, এবার তিনি মালদায় নিজের বাড়ি ফিরবেন। সে যে করেই হোক। স্ত্রী ও সাড়ে ৩ বছরের সন্তানকে নিয়ে ঘরে ফিরবেন। গোবিন্দ স্থির করেন তিনি একটি সাইকেল রিকশা কিনবেন। একটি সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল রিকশা পেয়েও যান। দাম পড়ে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। তারপর সেই রিকশায় স্ত্রী ও সন্তানকে বসিয়ে প্যাডেল শুরু করেন তিনি। যেতে হবে অনেক দূর। দিল্লি থেকে মালদহ। পকেটে তখন পড়ে আছে মাত্র ২০০ টাকা।
একটু রিকশা চালানোর পরই একটি চাকার হাওয়া বেরিয়ে যায়। ১৪০ টাকা খরচ করে সেই চাকা সারান গোবিন্দ। পকেটে তখন পড়ে মাত্র ৬০ টাকা। প্রবল ক্ষুধাকে সঙ্গী করে ৩টি প্রাণ এগোতে থাকে বাড়ির দিকে। উত্তরপ্রদেশ পর্যন্ত পৌঁছনোর পর সেখানে পুলিশ তাঁদের ধরে। গোবিন্দ পুরো কাহিনি জানান তাদের। পুলিশ তাঁদের কষ্ট বুঝে একটি গ্যাস স্টোভ তাঁদের দান করে। যাতে অন্তত রাস্তায় কিছু ফুটিয়ে খেতে পারেন। এরপর প্রবল গরম, চরম ক্ষুধা, দুঃসহ ক্লান্তিকে সঙ্গী করে কেবল বাড়ি পৌঁছনোর লক্ষ্য স্থির করে প্যাডেল ঘোরাতে থাকেন গোবিন্দ।
১৫ দিন টানা সাইকেল রিকশা চালিয়ে অবশেষে তিনি পৌঁছন ঝাড়খণ্ডের দেওঘর। আর তখন শরীরে এতটুকুও শক্তি অবশিষ্ট নেই। রিকশাটির একটি চাকাও আর কাজ করছে না। অগত্যা থামতে হয় গোবিন্দকে। দেওঘরে একটি কমিউনিটি কিচেনে পরিবার নিয়ে পেট ভরে খাবার খান গোবিন্দ। এখনও যেতে হবে অনেক দূর। তার আগে এখন দেওঘরেই রিকশা সারিয়ে ফের পাড়ি দেওয়ার তোড়জোড় করছেন গোবিন্দ মণ্ডল। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা