এক পুরানি চপ্পল দে দো সাহিব, আর্তি পরিযায়ী শ্রমিকের
মাইলের পর মাইল হেঁটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাড়ি ফিরছেন অনেক পরিযায়ী শ্রমিক। খালি পায়েই অনেকে হেঁটে চলেছেন। পা দিয়ে ঝরছে রক্ত।
লখনউ : পায়ের পাতা বলে বোঝা দায়। চামড়া ফালাফালা হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় ফোস্কা। ফেটে রক্ত ঝরছে। পুরো পাতাটা জুড়ে ধুলোয় মাখামাখি। পা ফেলার মত পরিস্থিতি নেই। এমন অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিয়ে ফের চরম কষ্ট সহ্য করেও পথ হাঁটছেন তাঁরা। লক্ষ্য একটাই। যেভাবেই হোক বাড়িটা পৌঁছতে হবে।
এমনই এক যুবক তিলোকি কুমার। ৩২ বছরের ওই যুবক কাজ করতেন সুরাটে একটি কাপড়ের কারখানায়। বাড়ি গোরক্ষপুরের পিপরাইচে। হেঁটেই বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। পা ফেলার মত অবস্থাও তাঁর নেই। মাইলের পর মাইল খালি পায়ে হেঁটে রক্ত ঝরছে পা দিয়ে। তাঁর এখন একটাই আর্জি, দয়া করে কেউ যদি এক জোড়া পুরনো চটি তাঁকে পরার জন্য দেন।
তিলোকি কুমার আরও জানাচ্ছেন যে তিনি খাবার চিন্তা করছেন না। কোথাও না কোথাও তিনি খাবারটুকু পেয়ে যাবেন। না পেলেও একটা দিন চালিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু পায়ের এই অবস্থায় হাঁটতে পারবেননা। জুতোটা বড্ড দরকার। তিলোকি যে চটি জোড়া পরে সুরাট থেকে হাঁটতে শুরু করেন তা উত্তরপ্রদেশ সীমান্তে পৌঁছনোর আগেই ছিঁড়ে গেছে। ফলে খালি পায়েই হাঁটতে শুরু করেন তিনি।
প্রবল পিচগলা গরম রাস্তা ধরে খালি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে তাঁর পায়ের পাতার আর কিছু নেই। জুতো কেনার টাকা কেউ দিতে চাইলেও নিতে রাজি হননি তিনি। সাফ জানিয়েছেন কোনও দোকান খোলা নেই। কোথায় পাবেন জুতো? বরং কেউ যদি এক জোড়া পুরনো চটি দেন তো উপকার হয়।
লখনউয়ের কাছে একটি দোকান ৬০ টাকায় চটি দিচ্ছে এমনই মানুষগুলোকে। পরিযায়ী শ্রমিকদের এই অক্লান্ত হাঁটায় চটি একটা বড় সমস্যা হয়ে সামনে এসেছে। অনেক শ্রমিকই খালি পায়ে হাঁটছেন। রক্তাক্ত পায়ে হাঁটে চলেছেন। তাই এই কাহিনিতে তিলোকি কেবলই একটা উদাহরণ মাত্র। তিলোকির মত হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের এই একই কাহিনি। একজোড়া পুরনো চটিও তাঁদের এখন হাতে চাঁদ পাওয়ার সুখ দিচ্ছে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা