২০ বছরের লড়াইয়ের স্বীকৃতি, ট্র্যাক্টর উপহার পেলেন ‘ক্যানাল ম্যান’
২০ বছর ধরে একা লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি। রাত দিন এক করে মাটি কেটেছেন গ্রামে জল আনতে। অবশেষে ২০ বছর পর তাঁর স্বীকৃতি পাওয়া শুরু হল।
গয়া (বিহার) : লক্ষ্যে স্থির থাকলে যে একদিন না একদিন তার স্বীকৃতি মেলে তা ফের একবার প্রমাণ হল। তাঁর লড়াইকে কুর্নিশ জানানোর মত স্বীকৃতি নাও হতে পারে। তবে স্বীকৃতি মেলে। যা প্রমাণ হল বিহারের ‘ক্যানাল ম্যান’ লৌঙ্গি ভুইঞার ক্ষেত্রেও।
শুকনো গ্রামের খেতকে সবুজে ভরে দিতে একাই ২০ বছর আগে হাতে তুলে নিয়েছিলেন বেলচা, শাবল। তারপর মাটি কাটতে শুরু করেন। মাটি কেটে খাল বানিয়ে গ্রামে জল আনাই ছিল লক্ষ্য।
২০ বছর তাঁর লড়াই তিনি একাই চালিয়ে গেছেন। অবশেষে তিনি সংবাদের শিরোনামে আসার পর লৌঙ্গিকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল মহিন্দ্রা গ্রুপ। তাঁকে একটি ট্র্যাক্টর উপহার দিয়েছে সংস্থা।
বিহারের দশরথ মাঝি-র কথা নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে। যাঁকে দেশ চেনে ‘মাউন্টেন ম্যান’ হিসাবে। বিহারের গহলৌরের বাসিন্দা দশরথ একাই কেটে ফেলেছিলেন একটি পাহাড়। পাহাড়ের বুক চিরে রাস্তা তৈরি করে গ্রামকে জুড়ে দিয়েছিলেন ওয়াজিরগঞ্জের সঙ্গে। গ্রামে পৌঁছনোর ৫৫ কিলোমিটার পথ কমে দাঁড়িয়েছিল ১৫ কিলোমিটারে।
২২ বছর ধরে একা লড়াই করে কেবল একটা ছেনি-হাতুড়ি নিয়ে আস্ত পাহাড় কেটে শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন দশরথ। তাঁর কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন আর এক বিহারবাসী লৌঙ্গি ভুইঞা।
কোলিথওয়া গ্রামের বাসিন্দা লৌঙ্গি ভুইঞা ছোট থেকেই দেখেছেন গ্রামে চরম জলাভাব। সেচের জন্য জল একেবারেই আসেনা। বৃষ্টি যেটুকু হয় তাতে চাষ হয়না। গ্রামে অর্থ উপার্জনের রাস্তা কেবলমাত্র চাষাবাদ। সেই চাষাবাদই জলাভাবে লাটে ওঠায় গ্রামের তরুণ প্রজন্ম রোজগারের জন্য পাড়ি দিচ্ছেন অন্যত্র। গ্রামে পড়ে থাকছেন কেবল বৃদ্ধ, শিশু ও মহিলারা। এটা লৌঙ্গি ভুইঞার ভাল লাগেনি।
২০০১ সালে লৌঙ্গি স্থির করেন কেউ না করুক তিনি নিজেই গ্রামে জল আনার ব্যবস্থা করবেন। যাতে গ্রামে চাষাবাদের বিকাশ ঘটে। গ্রামটি চারদিক থেকে জঙ্গলে ঘেরা। সেই বাগেথা সাহওয়াসি জঙ্গলে রয়েছে একটি জলাধার। যা গ্রাম থেকে বহু দূরে।
লৌঙ্গি ভুইঞা স্থির করেন তিনি ওই জলাধার থেকে জল আনার জন্য একটি খাল কাটবেন। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। বেলচা, শাবল নিয়ে লৌঙ্গি ভুইঞা নেমে পড়েন গ্রাম থেকে খাল কাটার কাজে।
গত ২০ বছর ধরে সেই খাল তিনি কেটে চলেছেন। একাই কাটছেন এই খাল। ৪ ফুট চওড়া ও ৩ ফুট গভীর এই খাল। গত ২০ বছরে তিনি ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত খাল কেটেছেন।
প্রথম দিকে গ্রামের লোকজন তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করতেন। কিন্তু তাতে কান দেননি লৌঙ্গি ভুইঞা। নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। ২০ বছর পর তাঁর এই কাজের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তারা জানিয়েছে আগামী দিনে এই খালের নাম হবে ‘লৌঙ্গি খাল’।
বিহারের দশরথ মাঝির পর এবার লৌঙ্গি ভুইঞা আবার এক ইতিহাস গড়লেন। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা