রাবণ বেচছেন জামাকাপড়, সীতা ব্যস্ত সেলুনে
রাবণ এখন ভীষণ ব্যস্ত। তাঁর জামাকাপড়ের দোকান। রোজগারের জন্য সীতা ব্যস্ত রয়েছেন সেলুনে।
লখনউ : প্রতি বছরের মতই আশ্বিনের সোনালি রোদ, নীল আকাশ, পেঁজা তুলোর মত মেঘ, মাঠে মাঠে কাশের দোলা সবই রয়েছে। নেই যেটা সেটা হল উৎসবের মেজাজ। করোনা এবার উৎসবের মেজাজ, আনন্দ সবই কেড়ে নিয়েছে। বাঙালির দুর্গাপুজো আসছে ঠিকই, কিন্তু সেই মায়ের আসার আনন্দ কোথায়? একই অবস্থা গোটা দেশের।
সংক্রমণ, মৃত্যুর হিসাব কষতে কষতে ক্রমশ মনমরা হয়ে পড়া মানুষ এখন আর উৎসবে মেতে ওঠার উৎসাহ পাচ্ছেন না। তাছাড়া উৎসব পালন করতে গেলে মানুষে মানুষে যে মেলবন্ধন তৈরি হয় তা এবার সামাজিক দূরত্বের কারণে উধাও হতে বাধ্য। অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে উৎসবের দিনগুলোর জন্য।
উৎসব পালনে নানা বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও উৎসব হয়তো হবে। কিন্তু উৎসবের অনেক প্রচলিত অঙ্গ এবার হয়তো বাদ পরতে চলেছে। যেমন নবরাত্রিতে রামলীলা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষত উত্তর ভারতে রামলীলা এক অন্য আকর্ষণ। রামায়ণের অংশ নিয়ে রামলীলা দেখতে সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন মানুষজন। কিন্তু করোনাকালে সেই রামলীলা এবার হচ্ছেনা অনেক জায়গায়। রামলীলার জন্য অভিনেতারা মাস দুয়েক আগে থেকেই রিহার্সাল শুরু করে দেন। কিন্তু এবার সেসব বন্ধ।
লখনউ শহরের ডালিগঞ্জ এলাকার রামলীলা বিখ্যাত। সেই রামলীলায় সীতার ভূমিকায় অভিনয় করেন সঙ্গীতা। সঙ্গীতা নাট্যকর্মী। তিনি সারা বছর ব্যস্ত থাকেন ছোটদের নাটকের ওয়ার্কশপ নিয়ে। আর রামলীলায় সীতার ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য এই সময় ২ মাস রিহার্সালে ব্যস্ত থাকেন।
এবার সব বন্ধ। ছোটরাও কেউ নাটক শিখতে আসছে না। ফলে পেট চালানোর তাগিদে সঙ্গীতা এখন সেলুনে কাজ করছেন। বোনের সেলুনে কাজ করেই দিন কাটছে তাঁর।
একইভাবে ব্যস্ত রাবণও। রাবণ মানে রাবণের ভূমিকায় অভিনয় করা মহম্মদ আশরাফ এবার রামলীলা না থাকায় কিছুটা ভেঙেও পড়েছেন। গত ১২ বছর ধরে টানা তিনি রামলীলায় রাবণের ভূমিকায় অভিনয় করে আসছেন। এবার রামলীলা হবে না জেনে রোজগারের তাগিদে নেমে পড়েছেন জামাকাপড়ের ব্যবসায়। অভিনয় ছেড়ে এখন জামাকাপড় বিক্রিতে ব্যস্ত তিনি।
একইভাবে ব্যস্ত অঙ্গদ। অঙ্গদের ভূমিকায় অভিনয় করা রাকেশ কুমার সমানভাবে আশাহত হয়েছেন। অভিনয় ছেড়ে তিনি এখন ব্যস্ত জিম নিয়ে। কদিনই হল জিম খুলেছে দেশে। সেই জিমেই এখন ট্রেনারের কাজ করছেন রাকেশ। শুধু আশাহতই নয়, একটা আতঙ্কও কাজ করছে তাঁদের মধ্যে। সেটা করোনা আতঙ্ক নয়।
উত্তরপ্রদেশ সরকার এবার ভার্চুয়াল রামলীলার কথা বলেছে। সঙ্গীতা, মহম্মদ আশরাফ বা রাকেশ কুমারদের সেটাও এখন চিন্তায় ফেলেছে। কারণ তাঁদের ধারণা শুধু এ বছর বলেই নয়। এই ট্রেন্ড যদি চালু হয়ে যায় তাহলে ভার্চুয়াল রামলীলা আগামী দিনে এই সনাতনি রামলীলার টান কমাবে। তাতে তাঁদের ভবিষ্যতে আর রামলীলা করাও হবেনা। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা