মেজর সেজে ১৭ জন তরুণীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা লুঠ
১৭ জন তরুণীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে টাকা লুঠ। এটাই ছিল উদ্দেশ্য। মেজর পদাধিকারী সেজে এই কাণ্ড চালাচ্ছিল এক যুবক।
হায়দরাবাদ : ভারতীয় সেনায় সে মেজর পদে রয়েছে। এটাই বলত সে মেয়েদের পরিবারের কাছে। ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইট থেকে সেনাকর্মীর সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে ইচ্ছুক পরিবার খুঁজে বার করত সে। তারপর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত একজন মেজর সেজে।
সঙ্গে ফেসবুকে তার তৈরি পেজে থাকত অনেক ছবি। যাতে সেনার পোশাকে তার ছবি ছাড়াও থাকত একজন অবিবাহিত তরুণের মত সেজে অনেক ছবি। যা দেখে হবু কনে বা তাঁর পরিবারের ভাল লাগত। এরপর মেয়ের বাড়ি থেকে যোগাযোগ করা হত তার সঙ্গে।
ঠিক হত তার অফিস থেকেই সে অনলাইনে সময়মত কথা বলে নেবে। তারপর মেয়ের বাড়িতে আসত ফোন। সেখানে অনলাইন হলেই মেয়ে ও তার পরিবার দেখতে পেতেন একটি সুসজ্জিত সেনাকর্মীর ঘর। সেখানেই সেনার পোশাকে বসে আছে ওই যুবক।
তার কথাবার্তা, আদবকায়দায় সকলেই মোহিত হতেন। তারপর মেয়ের বাড়িতে হাজির হত ওই যুবক। নিজের গাড়িতে হাজির হত। অনেক সময় সেনার পোশাকেও হাজির হত।
এভাবে মেয়ের পরিবারের সঙ্গে বাড়ত ঘনিষ্ঠতা। মেয়ের সঙ্গেও বিয়ে আগে এখনকার প্রচলিত ধারণা মত কিছুটা মেলামেশা শুরু করত সে। মেয়ের পরিবারকে জানিয়ে দিত তখনই সে বিয়েতে রাজি হবে যদি মেয়ের বাড়ি পণ দিতে অরাজি হয়। কারণ সে পণ নেওয়ায় বিশ্বাসী নয়।
মেয়ের পরিবারের আরও ভরসা বাড়ত। এরমধ্যে সে কাউকে দেখাত সে আইআইটি থেকে পাশ করেছে। কাউকে বলত পরিবেশ সংক্রান্ত ইঞ্জিনিয়ারিং করেছে সে। কাউকে বলত মাস্টার ডিগ্রি রয়েছে তার। এমন সব ভুয়ো সার্টিফিকেটও তৈরি করেছিল সে।
আর এভাবে একজন দুজন নয়, ১৭ জন তরুণী ও তার পরিবারকে বোকা নিয়েছে ওই যুবক। বিয়ের পিঁড়িতে কারও সঙ্গেই বসেনি। বিয়ের আগেই সে কোনও না কোনও জরুরি প্রয়োজন দেখিয়ে মেয়ের পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিত। এমন করে ৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার ওপর সে জোগাড় করেছিল।
পুলিশ জানাচ্ছে মুদাভাত শ্রিনু নায়েক নামে ওই যুবক নিজেকে শ্রীনিবাস চৌহান বলে পরিচয় দিত। সে এই জালিয়াতির জন্য হায়দরাবাদে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে ঘরটিকে তার সেনা মেজরের অফিসের মত বানিয়ে ফেলেছিল।
সেখানে বসেই অনলাইনে মেয়ের বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করে চলত জালিয়াতি। কিন্তু ১৮ নম্বর জালিয়াতিটা করতে গিয়েই পুলিশের জালে পড়ে সে। তার আগেই তার জালিয়াতির শিকার পরিবারগুলির তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ এসেছিল।
পুলিশ তৎপর ছিল। তারপর ফাঁদ পেতে তাকে তার জালেই ফেলে পাকড়াও করে পুলিশ। ওই যুবকের কাছ থেকে ৩টি সেনা পোশাক, সেনার টুপি, সেনার ব্যাজ, সেনার ভুয়ো পরিচয়পত্র, সেনা পোশাকে ২টি ছবি উদ্ধার হয়েছে।
এভাবে টাকা হাতিয়ে সে হায়দরাবাদে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও ৩টি গাড়িও কিনে ফেলেছিল। সেই মহিন্দ্রা থর জিপ, একটি ফরচুনা গাড়ি ও একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। আপাতত তাকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা