হাসপাতাল থেকে কনেকে এনে বিয়ে করলেন বর, ফের ফেরত হাসপাতালে
এমনটা সিনেমায় হয়। কিন্তু বাস্তবে যে এমন মানুষও রয়েছেন তার প্রমাণ দিলেন এক যুবক। বিয়ের দিনই জীবনের জন্য প্রতিবন্ধী হওয়া এক তরুণীকে বিয়ে করলেন তিনি।
প্রতাপগড় (উত্তরপ্রদেশ) : এ যেন ঠিক সিনেমা। এমন হিরো পর্দায় দেখা যায়। কিন্তু বাস্তব জীবনে পর্দার হিরোদেরও হারিয়ে দিলেন অবধেশ। যে উদাহরণ তিনি রাখলেন তা দেশের মানুষের কাছে এই বার্তাই দিল যে দেশের যুব সমাজের কাছে এখনও রয়েছে ভালবাসার দাম।
বিয়ের দিনেই ঘটে যায় ঘটনাটা। গত বুধবারের কথা। কনের বাড়িতে সবে বিয়ের সাজে সেজে উঠেছেন কনে। পরনে বিয়ের শাড়ি। হাতে মেহেন্দি। চলছে সাজগোজ।
বিয়ের আর কিছুক্ষণই বাকি। সেই সময় সিঁড়ির কাছে তিনি দেখেন একটি বাচ্চাকে। বাচ্চাটি যাতে সিঁড়ি থেকে পড়ে না যায় সেজন্য তাকে বাঁচাতে গিয়ে পা হড়কান ওই বিয়ের সাজে থাকা আরতি। পা হড়কে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়েন নিচে।
ভয়ংকর আহত অবস্থায় তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটেন পরিবারের লোকজন। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান আরতির শরীরের অবস্থা ভাল নয়। অনেক মাস তাঁকে শয্যাশায়ী হয়ে থাকতে হবে। এমনকি সারা জীবনের জন্যই হয়তো প্রতিবন্ধী হয়ে যাবেন তিনি।
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে গোটা পরিবারের। সব ঘটনার কথা পাত্রপক্ষকে জানান তাঁরা। পাত্রের বাড়িতে সকলে তখন বিয়েতে রওনা দিতে তৈরি। সেই সময় এমন এক খবরে তাঁরাও হতবাক হন।
কনের বাড়ি বুঝতে পারে যে আরতিকে আর বিয়ে করতে রাজি হবেনা পাত্র। তাই সেই প্রসঙ্গেই না গিয়ে তাঁরা সরাসরি পাত্রের পরিবারকে জানান তাঁরা ওই মণ্ডপে ওদিনই তাঁদের ছোট মেয়ের সঙ্গে অবধেশের বিয়ে দিতে রাজি।
সব শোনার পর অবধেশ তাঁর পরিবারকে যা জানান তা তাঁদের সকলকে অবাক করে দেয়। অবধেশ স্পষ্ট জানিয়ে দেন অন্য কাউকে নয়, তিনি আরতিকেই বিয়ে করবেন।
বাড়ির তরফে তাঁকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা হয় আরতিকে এই অবস্থায় বিয়ে করাটা তাঁর ভুল হবে। কিন্তু অবধেশ নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন।
পুরো বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হলে তাঁরা আরতিকে হাসপাতাল থেকে মাত্র ২ ঘণ্টার জন্য ছুটি দিতে রাজি হন। স্ট্রেচারেই আরতিকে নিয়ে আসা হয় বাড়িতে। সেখানেই অবধেশের সঙ্গে তাঁর বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। ২ ঘণ্টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান সেরে আরতিকে ফেরত পাঠানো হয় ফের হাসপাতালে।
বিয়েটা হয় স্ট্রেচারে শুয়ে। কারণ ওঠার মত পরিস্থিতিই আরতির নেই। হাসপাতালে ফেরত যাওয়া আরতির সঙ্গে অবধেশও সেখানে যান।
আরতির একটি অপারেশন করেন চিকিৎসকেরা। সেখানে অবধেশই আরতির স্বামী হিসাবে সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করেন। আর সেই বুধবার থেকেই তিনি হাসপাতালে পড়ে রয়েছেন। সদ্যবিবাহিত স্ত্রীকে তিনি এক মুহুর্ত কাছ ছাড়া করেননি।
আরতির সবরকম দেখভালও নিজে হাতেই করছেন অবধেশ। জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর স্ত্রীর দায়িত্ব তাঁর। তিনিই তাঁর যাবতীয় খরচ বহন করবেন।
অবধেশকে দু’হাত তুলে এখন আশির্বাদ করছেন সকলে। সেইসঙ্গে সকলে প্রার্থনা করছেন আরতি যেন নিজের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পান। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা