লুঠ হয়ে গেল রাস্তায় পড়ে থাকা অগুন্তি ফুলকপি
যাঁর যতগুলো তোলা সম্ভব, তিনি ততগুলোই নিয়ে মহানন্দে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলেন। এজন্য খরচ হল না ১ টাকাও। তবে বাড়িতে ফুলকপি কার্যত মজুত করা হয়ে গেল।
পিলিভিট (উত্তরপ্রদেশ) : শীতের মরসুমি আনাজের মধ্যে ফুলকপির স্বাদ অতি উপাদেয়। এ নিয়ে দ্বিমত হবেন না অনেকেই। ফলে ফুলকপির চাহিদাও থাকে যথেষ্ট। শীতের দিনে পাতে নানা ফুলকপির পদ জিভে জল আনতে বাধ্য। বাজারে ফুলকপির তাই চাহিদাও যেমন থাকে তেমন দাম নেহাত কম হয়না।
যদিও এবার ফুলকপির ফলন বেশি হওয়ায় কিছুটা হলেও কমেই মিলছে ধবধবে সাদা এই সুস্বাদু আনাজ। কিন্তু এমনটা যদি হয় যে ফুলকপি কিনতে হল না বরং যতটা খুশি কেউ রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে চলে গেলেন। এমনটা কেমন করে সম্ভব! মনে হতেই পারে। কিন্তু ঠিক সেটাই হয়েছে।
রাস্তার ওপর উলঢাল করে গড়াগড়ি দিচ্ছে অগুন্তি ফুলকপি। আর আশপাশের মানুষজন যে যত খুশি ফুলকপি তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছেন নিজের মত করে। এই ঘটনাই ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের পিলিভিট-এ। এমন এক অবাক করা ঘটনা স্বভাবতই নজর কেড়েছে। রীতিমত খবর হয়েছে এই ফুলকপি লুঠ।
জাহানাবাদের বাসিন্দা মহম্মদ সেলিমের আধ একর জমি রয়েছে। সেখানে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে থাকেন তিনি। এবার চাষ করেছিলেন ফুলকপি। সেই কপি বিক্রির অবস্থায় আসতেই তিনি মাঠ থেকে সেই কপি তুলে নিয়ে চলে আসেন হোলসেল বাজারে।
কিন্তু সেখানে আসার পর তাঁকে যে দাম ওই কপির জন্য দিতে চাওয়া হয় তাতে তিনি চরম বিরক্ত হন। মাত্র ১ টাকা কেজি দরে কপি বিক্রি করতে তিনি কিছুতেই রাজি ছিলেননা। বরং প্রতিবাদের ভাষা হিসাবে সেই কপি তিনি ছড়িয়ে দেন রাস্তায়। কেজিতে ১ টাকা পাওয়ার চেয়ে বরং দরিদ্র মানুষজন ওই কপি বিনামূল্যে তুলে নিয়ে যান, তবু ভাল, এটাই ছিল তাঁর বার্তা।
ফুলকপির ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হয়না। তাই যে কোনও বড় বিক্রেতা যে কোনও দাম দিতেই পারেন। তাতে কারও নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে না। বাজার কমিটির এমনটা দাবি হলেও বাস্তবে এক প্রান্তিক চাষি কী ১ টাকায় কপি বিক্রি করে লাভের চিহ্নমাত্রও দেখতে পাবেন? প্রশ্নটা উঠছে।
আরও উঠছে সেলিমের দেওয়া হিসাবে। যেখানে তিনি সাফ জানিয়েছেন এই কপি চাষ করতে বীজ কেনা, জীবাণুনাশক কেনা, মাঠ চষা থেকে যাবতীয় খরচ বাবদ তাঁর ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
তার ওপর বাজার পর্যন্ত তাঁর উৎপাদিত ফসল আনতে পরিবহণে খরচ হয়েছে ৪ হাজার টাকা। আর এসে শুনছেন ১ টাকা কেজি দাম পাবেন তিনি।
যা কিন্তু শুধু সেলিমের ঘটনাকেই চোখে আঙুল দিয়ে তুলে ধরল না। দেশের প্রান্তিক কৃষকদের দুরবস্থার কথাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
বাজারে ফুলকপির খুচরো মূল্য প্রতি কেজি ১২ থেকে ১৪ টাকা চলছে। যদি তা নাও পান, তাহলেও কমপক্ষে ৮ টাকা কেজি দরে দাম পাবেন বলে আশা করেছিলেন ওই প্রান্তিক চাষি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা শুধু তাঁর আশাভঙ্গই করেননি একেবারে পথে বসিয়ে দিয়েছেন।
মা, ভাই, স্ত্রী ও দুই স্কুল পড়ুয়া সন্তান নিয়ে সেলিমের সংসার। এতজনের সংসার এবার কিভাবে চালাবেন তা ভেবে মাথায় হাত পড়েছে সেলিমের। ভাইকে সঙ্গে করে শ্রমিকের কাজ করতে হবে বলে কার্যত স্থির করে ফেলেছেন তিনি। কারণ ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রেও তেমন সুবিধা পাবেন না বলে তাঁর মত।
শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও প্রান্তিক চাষিদের উপেক্ষা করে চলে বলে অভিযোগ সেলিমের। তাই তাঁদের বাধ্য হয়ে বেসরকারি ঋণ নিতে হয়, যার সুদের টাকা মেটাতে গায়ের রক্ত জল করতে হয় চাষিদের।
সেলিম তাঁর প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁর উৎপাদিত সব ফুলকপি ফেলে দিয়ে। এমন বহু প্রান্তিক চাষি রয়েছেন যাঁরা সেলিমের মতই বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন, কিন্তু তাঁদের বঞ্চনার কথা প্রচারের আলোয় আসতে পারছে না। সেলিমের প্রতিবাদ তাঁদের সেই নিদারুণ যন্ত্রণার এক জ্বলন্ত ছবি হয়ে উঠে এল। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা