সাতসকালে হোটেলে হাজির সিংহ
হোটেল ঘুরে দেখল একটি সিংহ। এমনই ছবি ধরা পড়েছে এই ভারতেই। হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরায় সিংহের সেই গতিবিধি নজর কেড়েছে।
গান্ধীনগর : সারাক্ষণ ইট, কাঠ, পাথরের জঙ্গলে থেকে মানুষ যেমন প্রকৃতির কোলে একটু সময় কাটাতে চায়, হয়তো একটি সিংহ তেমনই বনে থাকতে থাকতে একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পেতে ঢুকে পড়েছিল এক ঝাঁ চকচকে হোটেলে। অন্তত সেই ছবি ধরা পড়েছে সিসিটিভিতে।
বন্যেরা বনে সুন্দর প্রবাদটা অনেকেই জানেন আর প্রত্যেকেই মানেন। হিংস্র বন্যপ্রাণির থেকে শতহস্ত দূরে থাকাই কাম্য বলে সবাই মনে করেন। তার মধ্যেও কিছু মানুষ হন যাঁরা বন্যপ্রাণিদের ভালবাসেন ও তাদের সাথে সহাবস্থান অপছন্দ করেন না।
বন্যপ্রাণিদের সাথে সময় কাটাতে তাঁদের ছুটতে হয় জঙ্গলে। কারণ লোকালয়ে বন্যপ্রাণিদের নো এন্ট্রি। টিকিট কেটে চিড়িয়াখানায় খাঁচাবন্দি বাঘ সিংহ দেখতে আপত্তি নেই, কিন্তু হঠাৎ চোখের সামনে জঙ্গলের রাজা এসে হাজির হলে ভিরমি খাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এই ভারতেই কিন্তু এমন এক শহর আছে যেখানে মানুষ আর সিংহের দোস্তি দেখলে শোলে সিনেমার জয় আর বীরুর কথা মনে পড়ে যেতে পারে।
গুজরাটের জুনাগড় হল সেই শহর যেখানে প্রায়ই আনাগোনা করে মা দুর্গার বাহন। তবে তাদের দেখে জুনাগড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা শোরগোল ফেলে দেন না। গত সোমবারের এক ঘটনা তা আবার প্রমাণ করে দিল।
তখন প্রায় ভোর ৫টা। সেইসময় জুনাগড়ের সরোবর পোর্টিকো নামে এক বিলাসবহুল হোটেলের পার্কিং-এ একটি সিংহ শাবক ঢুকে পড়ে হঠাৎই।
অত সকালে ঘটনাটি ঘটার ফলে হোটেলের নিরাপত্তাকর্মীরা ছাড়া আর কেউই সিংহটিকে দেখতে পাননি। হোটেলের সিসিটিভি-তে ধরে পড়ে এই সিংহের ঢুকে পড়ার ঘটনাটি। সরোবর পোর্টিকো জুনাগড় শহরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত।
ভোরবেলা হোটেলের নিরাপত্তারক্ষী সিংহটিকে দেখে তৎক্ষণাৎই সাবধান হয়ে যান। কয়েক সেকেন্ড চোখের সামনে থেকে সিংহটিও চোখের আড়ালে চলে যায়।
যদিও এমনভাবে মানুষ সিংহ মোলাকাত এ অঞ্চলে কোনও নতুন ঘটনা নয়। হামেশাই জঙ্গল থেকে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে সিংহ, এমনটাই জানিয়েছেন ওই হোটেলটির মালিক সঞ্জয় কোরাডিয়া।
তিনি আরও বলেন, আজ অবধি জুনাগড়ের মানুষ কখনও সিংহের আক্রমণের মুখে পড়েনি। তবে চিতার আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের।
হোটেলে ঘোরাফেরা করা সিংহটিকে দেখে তাকে দলছুট বলে মনে করছেন জুনাগড়ের ডেপুটি কনসারভার অফ ফরেস্ট সুনীল বেরওয়াল। তিনি জানান, জুনাগড় বিখ্যাত সিংহের আবাসভূমি হিসেবে। গির অভয়ারণ্যের থেকে শহরটিকে আলাদা করা হয়নি। তাই প্রায়ই লোকালয়ে দেখা পাওয়া যায় সিংহের।
এলাকাবাসী এই বিষয়ে খুবই সহায়ক। নইলে দেশের অন্য কোনও স্থানে এই ঘটনা ঘটলে তা রীতিমত শোরগোল ফেলে দিত। এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ সিংহের উপস্থিতিতে অস্বস্তিবোধ করেন না, বরং গর্ব অনুভব করেন। আর সিংহগুলিও সচরাচর কাউকে আক্রমণ করে না।
সিংহ দল বেঁধে থাকতে পছন্দ করে। তাই মাঝেমাঝেই একাধিক সিংহকে একসাথে দেখে অভ্যস্ত জুনাগড়বাসী। কিন্তু হোটেলে যে বাচ্চা সিংহটিকে দেখা গেছে সে একাই ছিল। তাই অনুমান করা হচ্ছে কোনোভাবে সে দলছুট হয়ে পড়েছিল। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা