National

জঞ্জালের স্তূপে দাঁড়িয়ে আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখছে ফিনিক্সরা

ফিনিক্স পাখির মতই সব আশার শেষেও আশার আলো জ্বলে উঠেছে ওদের জীবনে। জঞ্জালের স্তূপে দাঁড়িয়ে আকাশে ডানা মেলার স্বপ্নে বিভোর ওরা।

নয়াদিল্লি : ওরা জঞ্জালের স্তূপ থেকে টেনে টেনে খুঁজে আনে টুকিটাকি জিনিস। সারা গায়ে কাদা, ময়লা মেখে দিনরাত নোংরার মধ্যে ওরা খুঁজে চলে দুমড়ে যাওয়া প্লাস্টিকের বোতল থেকে দলা পাকানো ছেঁড়া বস্তা। পেটের খিদে মেটাতে ছোট বয়স থেকেই কচি কচি হাতগুলোয় লেগে যায় ময়লার দাগ।

স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনা করা এসব তাদের স্বপ্ন নয়। ওইসব ওদের কাছে অলীক কল্পনা। তবে কল্পনাও কখনও কখনও বাস্তব হয়ে ওঠে মানুষের হাত ধরেই। নাহলে দিল্লির গাজিপুর সীমান্তে ময়লা কুড়নো শিশুরা কিভাবে নতুন স্কুল ইউনিফর্ম পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে প্রতিদিন স্কুলে পড়তে যাচ্ছে! আর তারা যে স্কুলে পড়তে যাচ্ছে সেখানে ভর্তি করার জন্য লম্বা লাইন পড়ছে মধ্যবিত্ত মানুষজনের।


গতবছর নভেম্বর থেকেই উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর সীমান্তে কৃষি বিল বাতিলের দাবিতে চলছে কৃষকদের আন্দোলন। এরই মধ্যে সীমান্তে আন্দোলনরত কৃষক ও সমাজকর্মীদের উদ্যোগে গড়ে উঠল এক পাঠশালা। তবে তা যে সে পাঠশালা নয়। সেখানে পড়তে আসে সমাজের সেইসব শিশুরা, যারা কখনও কল্পনাও করতে পারেনি তারাও স্কুল যেতে পারে।

সমাজকর্মী নির্দেশ সিং-এর উদ্যোগে সাবিত্রীবাই ফুলে পাঠশালাটি গঠিত হয়েছে এবছর ২২ জানুয়ারি। এরই মধ্যে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১৫০। প্রত্যেকটি পড়ুয়াই আগে জঞ্জাল কুড়নোর কাজ করত।


অল্প সময়ের মধ্যেই আশপাশের অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এই বিদ্যালয়। নির্দেশ সিং-এর কথায়, সিট সংখ্যা খুব বেশি না থাকলেও প্রতিদিনই ২ থেকে ৪ জন নতুন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়ার জন্য আসছে। আর্থিক সঙ্গতিহীন বাবা মায়েরাও সন্তানদের শিক্ষালাভ করার এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না।

প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর বিদ্যালয়ের পোশাক থেকে ব্যাগ, সবই সরবরাহ করছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্রছাত্রীরাও খুবই উৎসাহী স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করার জন্য। ইতিমধ্যেই অনেকে শিখে ফেলেছে ১ থেকে ১০-এর নামতা। লিখতেও শিখেছে অনেকে। লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদের শেখানো হচ্ছে পরিস্কারপরিচ্ছন্নতার পাঠও।

আন্দোলন শেষ হয়ে গেলে যাতে এই শিশুদের পড়াশোনার ইতি না হয় তারজন্য স্থানীয় বিদ্যালয়গুলির সাথে কথাবার্তা বলে ছাত্রছাত্রীদের সেখানে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

কৃষক আন্দোলনের ফলে কৃষি বিল বাতিল হবে কিনা তা এখনও অজানা। জানা নেই এই আন্দোলন দেশের কোটি কোটি কৃষকের কোনও সুরাহা করতে পারবে কিনা। তবে যেভাবে এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত মানুষরা কিছু দরিদ্র শিশুর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সাহায্য করছেন তা নজিরবিহীন। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা

Show Full Article
Back to top button