বন্য জন্তুর ভয়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিভৃতবাসে ১৪ করোনা পজিটিভ
করোনা হলে সকলের থেকে আলাদা করে ফেলতে হচ্ছে আক্রান্তদের। নিভৃতবাসে দিন কাটাতে হচ্ছে। নিভৃতবাস নিশ্চিত করতে কার্যত জীবনের ঝুঁকি নিলেন ১৪ জন করোনা পজিটিভ।
করোনা হলেই আইসোলেশন। এটা জরুরি। এজন্য বাড়িতে আলাদা ঘরেই থাকতে হচ্ছে করোনা সংক্রমিতদের। যাঁদের সে সুযোগ নেই তাঁদের জন্য তৈরি হয়েছে সেফ হোম।
কিন্তু এ দেশে এমনও অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে গ্রামের মানুষগুলোর আলাদা থাকার ঘর বলে কিছু নেই। তাঁরা করোনা পজিটিভ হলে আলাদা করে থাকার জন্য কাছে কোনও সরকারি বন্দোবস্তও নেই।
এমনই এক আদিবাসী গ্রামে ১৪ জনের দেহে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। করোনা পজিটিভ হওয়ার পর তাঁদের পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার কথা।
কিন্তু ওই ছোট্ট ঘরে আলাদা হওয়ার উপায় কোথায়? সরকারি ব্যবস্থাও কাছেপিঠে নেই। অগত্যা তাঁরা স্থির করেন পরিবার ও গ্রামের বাকিদের সুরক্ষিত রাখতে তাঁরা চলে যাবেন গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে।
১৪ জন করোনা সংক্রমিত গ্রামবাসী সময় নষ্ট না করে চলে যান গ্রাম ছাড়িয়ে গহন অরণ্যে। সেখানে খোলা আকাশের নিচে সবুজের মাঝে তাঁদের ধারেকাছে কেউ নেই। প্রকৃতির বুকেই তাঁরা নিভৃতবাসের আয়োজন করে ফেলেন।
সেখানেই দিন রাত পড়ে আছেন ১৪ জন। খাবার বলতে কয়েকজনের জন্য তাঁদের পরিবার খাবার তৈরি করে জঙ্গলের একটা জায়গায় রেখে যাচ্ছেন। তাঁরা সেই খাবার সংগ্রহ করে খাচ্ছেন।
বাকিরা রান্না করে নিচ্ছেন নিজেদের মত। একটি এনজিও এই খবর পেয়ে খাবারের জিনিসপত্র ওই মানুষগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া শুরু করেছে।
এভাবে ১ সপ্তাহের ওপর অতিক্রান্ত হওয়ার পর খবর যায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। বন্যপ্রাণির ভয় জঙ্গলে থাকেই। তারওপর রোদ নেই, বৃষ্টি নেই, গরম নেই তাঁরা এভাবে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন পরিবার ও গ্রামকে সুরক্ষিত রাখার জন্য একথা জানতে পেরে জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকরা ছোটেন সেখানে।
১৪ জনকে সরকারি একটি সেফ হোমে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও ততদিনে অনেকটা সময়ই তাঁরা জঙ্গলের বুকে আইসোলেশনে কাটিয়ে ফেলেছেন।
একটি সরকারি স্কুলে দ্রুত সেফ হোম বানিয়ে প্রশাসনের তরফে জানানো হয় এখানেই আগামী দিনে কোনও আদিবাসী সংক্রমিত হলে তাঁকে রাখা হবে।
তেলেঙ্গানার প্রত্যন্ত জঙ্গলঘেরা আদিবাসী গ্রামের ১৪ জন করোনা রোগীর জঙ্গলে নিজেদের কোয়ারেন্টিন করার ঘটনা কিন্তু যথেষ্ট চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা