ঋণ তো মিটলই না, বরং ঠগদের খপ্পরে সর্বস্বান্ত দম্পতি
ঋণ তো মিটলই না, বরং ঠগদের খপ্পরে পড়ে যা ছিল তাও গেল। এমনই এক ঘটনা চমকে দিয়েছে পুলিশকেও। ঠগদের জাল বোনার মধ্যে ছিল চরম নাটকীয়তাও।
স্বামী একটি স্টেশনারি দোকান চালান। স্ত্রী চুড়ি বিক্রি করেন। দোকান থেকে স্বামী স্ত্রীর রোজগারও ভালই হচ্ছিল। বেশ কাটছিল জীবন।
দম্পতি একটি চারতলা বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন। এজন্য দেড় কোটি টাকা ঋণও করেন। হিসাব করে দেখেছিলেন যা রোজগার রয়েছে তাতে ঋণ মেটাতে তাঁদের অসুবিধা হবেনা। কিন্তু সমস্যা হল করোনা পরিস্থিতি।
গত বছর করোনা থাবা বসানোর পর দম্পতির দোকান প্রায় বন্ধই ছিল। ব্যবসাও হচ্ছিল না। ফলে ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে।
ঋণ মেটানোর জন্য প্রবল চাপ আসতে থাকে ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে। অগত্যা ওই দম্পতি স্থির করেন তাঁরা তাঁদের কিডনি বেচে ঋণ শোধ করে দেবেন।
কিডনি বেচতে চেয়ে সোশ্যাল সাইটে বিজ্ঞাপনও দেন তাঁরা। অবশেষে তাঁদের কাছে একটি ফোন আসে। ফোন করা ব্যক্তি জানান তিনি ব্রিটেনের একটি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। কিডনি কেনার বন্দোবস্ত তিনি করবেন।
কিডনির জন্য দম্পতি দাম পাবেন ৫ কোটি টাকা। তবে এজন্য তাঁদের বিভিন্ন ফি যেমন রেজিস্ট্রেশন চার্জ, প্রসেসিং চার্জ, কারেন্সি এক্সচেঞ্জ চার্জ, ভিসা ফি, বীমা বাবদ প্রথমে কিছু টাকা দিতে হবে।
প্রথম খেপে ১০ লক্ষ টাকা পাঠাতে বলে ওই ব্যক্তি। ১০ লক্ষ টাকা ওই ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েও দেন দম্পতি।
ওই ব্যক্তি আরও টাকা চাওয়ায় সন্দেহ হয় দম্পতির। এবার অন্য একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই দম্পতি। ওই ব্যক্তি ১২ লক্ষ টাকা চায়। সেটা দিয়ে ফের ঠকেন দম্পতি।
তাঁরা এবার আরও ২ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এদের মধ্যে একজন আশ্বাস দেয় রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিলে দম্পতিকে কিডনির জন্য অগ্রিম অর্ধেক টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। হায়দরাবাদের বাসিন্দা ওই দম্পতিকে তারা বেঙ্গালুরুর একটি লজে গিয়ে অগ্রিম বাবদ টাকা সংগ্রহও করতে বলে।
কথা মত কিডনি বেচার অর্ধেক টাকা সংগ্রহ করতে লজে উপস্থিত হন দম্পতি। সেখানে তাঁদের অনেকগুলি কালো কাগজ দিয়ে এক ব্যক্তি বলে এগুলোই টাকা।
হতবাক হয়ে যান দম্পতি। কালো কাগজগুলো টাকা! তখন ওই ব্যক্তি পকেট থেকে একটি রাসায়নিক বার করে কয়েকটি কাগজের ওপর ছড়িয়ে দেয়। দেখা যায় কালো কাগজ সাফ হয়ে ২ হাজার টাকার নোট বেরিয়ে এল।
অবাক দম্পতিকে ওই ব্যক্তি বোঝায় যে এটা সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে করা হয়েছে। সে অনেকগুলি কালো কাগজ ও রাসায়নিকের একটি শিশি ওই দম্পতিকে দিয়ে দেয়। বলে ৪৮ ঘণ্টা পর রাসায়নিক ঢেলে যেন তাঁরা কালো কাগজগুলোকে টাকা করে নেন।
দম্পতিকে ওই ব্যক্তি জানায় অবিলম্বে যেন তার অ্যাকাউন্টে ১৪ লক্ষ টাকা তাঁরা ফেলে দেন। অগ্রিম পেয়ে গেছেন জেনে সে টাকাও দম্পতি দিয়ে দেন।
এরপর ৪৮ ঘণ্টা পর না তো কালো কাগজ রাসায়নিকে টাকা হয়, আর না ওই ব্যক্তি ফোন ধরে। দম্পতি বুঝতে পারেন তাঁরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।
এরপর পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। জানান বাড়িতে যা সোনাদানা ছিল সব বন্ধক দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ বিভিন্ন জনকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা তাঁরা দিয়েছেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা