হেরে গেল বাধার পাহাড়, জীবনযুদ্ধে শেষ হাসি হাসলেন আশা
বাধা যতই হোকনা কেন, সংকল্পের সামনে কোনও বাধাই জিততে পারেনা। যার এক নয়া উদাহরণ গড়ে দিলেন পেশায় ঝাড়ুদার আশা। অনেকটা স্বপ্নের মতই তাঁর উত্থান।
অফিসের ঘরগুলো ঝাঁট দেওয়ার সময় হাতে ঝাড়ু নিয়ে আশা স্বপ্ন দেখতেন ঘরে যে চেয়ারটা রয়েছে, যেখানে কিছুক্ষণ পরই এসে বসবেন কোনও বড় সরকারি আধিকারিক, সেই চেয়ারে একদিন তিনি বসে আছেন। কিন্তু পেশায় তিনি ঝাড়ুদার।
ছিলেন অস্থায়ী কর্মী। সেখান থেকে কদিন আগেই তিনি প্রোমোশন পেয়ে স্থায়ী ঝাড়ুদারের চাকরি পেয়েছেন সরকারি দফতরে। আশা কিন্তু স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি।
কিন্তু স্বপ্ন দেখতে গেলে তো রাস্তাটা পরিস্কার হতে হবে। তা তো নেই। তিনি ইতিমধ্যেই এক সিঙ্গল মাদার। বিয়ে হয়েছিল। সংসার করছিলেন গুছিয়ে। ২ সন্তানের জন্মও দেন।
সংসার নিয়েই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। কিন্তু অন্ধকার নেমে আসে তখন যখন স্বামীর সঙ্গে তাঁর ৮ বছর আগে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। আশা জোর গলায় জানিয়ে দেন তাঁর ২ সন্তানের দায়িত্ব তাঁর। কাউকে তিনি এ দায়িত্ব ছাড়বেন না।
তারপর থেকে আশা সিঙ্গল মাদারের ভূমিকা পালন করছেন। রাস্তা বা দফতর ঝাঁট দিয়ে রোজগার করে সন্তানদের মুখে অন্ন তুলে দিয়েছেন। চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করেছেন। কিন্তু আত্মসম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচেছেন। আর স্বপ্ন দেখেছেন। স্বপ্নের পিছনে ছুটেছেন।
ঝাড়ুদারের কাজ করে, ২ সন্তানকে প্রতিপালন করে সময় বার করে লেখাপড়াও করেছেন। আর তা এতটাই মন দিয়ে করেছেন যে রাজস্থান অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস-এর পরীক্ষায় তিনি পাশও করেছেন।
এ সেই পরীক্ষা যার জন্য অনেক মেধাবী ছেলে মেয়ে রাতদিন এক করে অনেক কোচিং সেন্টারে জুতোর সুকতলা খইয়েও পাশের মুখ দেখে উঠতে পারেননা। সেই পরীক্ষায় এই কঠিন জীবন যুদ্ধ লড়েও আশা জয়ী হন।
আশার সাফল্যের কথা এখন রাজস্থানে সকলের মুখে মুখে ঘুরছে। সবে রেজাল্ট বার হয়েছে। তাতে রাজ্যে ৭২৮ নম্বর স্থানে থেকে পাশ করেছেন আশা। স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি।
একদিন বাবুদের ঘর ঝাঁট দিতে দিতে যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, সেই চেয়ারগুলো এখন তাঁর অপেক্ষায়। আশার এই জীবনযুদ্ধ শুধু তাঁর স্বপ্নই পূরণ করল না, দেশের আপামর যুব সমাজকে দেখিয়ে দিল যদি একাগ্রচিত্তে অধ্যবসায়ের সঙ্গে কেউ কোনও কিছুর পিছনে ছুটতে থাকে তবে একদিন না একদিন সাফল্য ধরা দেবেই। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা