বীজ বোমায় প্রাণ বাঁচাচ্ছেন কৃষকরা, রক্ষা পাচ্ছে গবাদি পশুরাও
বীজ বোমা ছুঁড়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন অনেক কৃষক। শুধু তাঁদের প্রাণই নয়, এই বীজ বোমায় রক্ষা পাচ্ছে গবাদি পশুরাও। বেঁচে যাচ্ছে ফসল।
ফসল পাকলে চিন্তায় রাতের ঘুম ওড়ে কৃষক পরিবারগুলোর। অনেক কষ্ট করে ফসল ফলান তাঁরা। কিন্তু মাঝেমধ্যেই সেই পাকা ফসলের ক্ষেতে হামলা হয়।
না কোনও মানুষের হামলা নয়। জঙ্গলের পশুদের হামলা। তারা জঙ্গল থেকে আচমকা হানা দিয়ে শুধু ফসলই শেষ করেনা, ঘরদোরও ভেঙে তছনছ করে দেয়। গবাদি পশুদের ওপরও হামলা চালায়।
জঙ্গলের পশুদের হামলায় অনেক মানুষ জখম হয়েছেন। অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। গবাদি পশুদেরও একই পরিণতি হয়েছে। এভাবে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে পশুদের হামলার মূল কারণ খাবার।
ফসল পাকলেই তারা খাবারের খোঁজে এসে পড়ে গ্রামে। তারপর শুরু হয় তাদের তাণ্ডব। এই পরিস্থিতি থেকে কৃষকদের মুক্তি দিতে ২০১৭ সালে শুরু হয় বীজ বোমা ছোঁড়া।
কী এই বীজ বোমা? পশুদের হামলা হওয়ার মূল কারণ খাবার। জঙ্গলে খাবারের সমস্যা হলে তখন তারা লোকালয়ে প্রবেশ করছে। বিশেষত সেসব পশু যারা শস্য বা আনাজ খেতে পছন্দ করে।
এই খাবারগুলো যদি তাদের জঙ্গলেই ব্যবস্থা করে দেওয়া যায় তাহলে তারা আর লোকালয়ে প্রবেশ করবে না। কিন্তু জঙ্গলের ধারে যাওয়া মানেই তো পশুদের কবলে পড়া। তাই তৈরি করা হয় বীজ বোমা।
মাটি ও সার জল দিয়ে মেখে দলা পাকিয়ে তার মধ্যে ২টি করে বীজ পোরা হয়। তারপর তা ছুঁড়ে দেওয়া হয় জঙ্গলের দিকে। গ্রামবাসীরাই তা ছুঁড়ে দেন জঙ্গলের দিকে।
এগুলি জল দিয়ে মাখার পর ছোঁড়ার আগে অবশ্য ২-৩ দিন শুকিয়ে নেওয়া হয়। এমন অবস্থায় আনা হয় যাতে তা নরমও না হয়, আবার শক্তও হয়ে না যায়।
এই অবস্থায় জঙ্গলের মাটিতে পড়ার পর বীজ থেকে ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই অঙ্কুর বার হয়ে ক্রমে গাছ বড় হতে থাকে। কুমড়ো, লাউ, শসা, ভুট্টা, বিভিন্ন ডাল শস্যের বীজ দিয়ে তৈরি হয় বীজ বোমা।
২০১৭ সালে উত্তরাখণ্ড জুড়ে শুরু হওয়ার পর এই প্রকল্পে দারুণ ফল মিলেছে। উত্তরাখণ্ডে এই বীজ বোমা এখন কৃষকদের জীবন রক্ষা করছে। তাঁদের ফসল রক্ষা করছে। গবাদি পশুদের রক্ষা করছে।
অনেক গ্রামের মহিলা, কিশোররা ঘরে ঘরে বীজ বোমা তৈরি করছেন। আর সেই বীজ বোমা ছোঁড়া হচ্ছে বর্ষার প্রথম দিকে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা