অভিমানে জঙ্গল যাত্রা, ভাঙা অ্যাম্বাসেডরকে ঘর বানিয়ে কাটল ১৭ বছর
এমনটা সিনেমায় হয়। বাস্তবেও যে হতে পারে তা দেখিয়ে দিলেন চন্দ্রশেখর। একরাশ অভিমান বুকে করে ২০০৩ সালে জঙ্গলে পাড়ি দিয়েছিলেন। আর ফেরেননি তথাকথিত সভ্যজগতে।
হলিউডে একটি সিনেমা হয়েছিল, ‘ইনটু দ্যা ওয়াইল্ড’। সেখানে এক প্রতিবাদী চরিত্রকে দেখানো হয়েছিল যিনি জঙ্গলে একটি ভাঙা গাড়িতে দিন কাটাবেন। সিনেমার সেই কাহিনি যে বাস্তবে দেখা যাবে তা কেউ ভাবেননি। অথচ সেটাই হয়েছে।
২০০৩ সালে একটি ব্যাঙ্ক থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন চন্দ্রশেখর। কিন্তু কয়েকজন মানুষের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি সময়ে ঋণ শোধ করতে পারেননি। ফলে তাঁর চাষ জমি নিয়ে নেয় ব্যাঙ্ক।
সেই থেকে মানুষের প্রতি চন্দ্রশেখরের প্রবল ক্ষোভ জমা হয়। ক্ষোভ জমে ব্যাঙ্ক নামক প্রতিষ্ঠানটির প্রতিও। একরাশ অভিমান নিয়ে তিনি স্থির করেন তথাকথিত সভ্যসমাজে তিনি থাকবেন না। থাকবেন জঙ্গলে।
সেই যে সেদিন চন্দ্রশেখর ঘন জঙ্গলে ঢুকে পড়েন তারপর থেকে ১৭ বছর পরও তিনি সেই জঙ্গলের অধিবাসী। তাঁর ঘরবাড়ি সবই একটি ভাঙা অ্যাম্বাসেডর গাড়ি।
জঙ্গলে থাকতে থাকতে চন্দ্রশেখরকে সব জন্তু চিনে গেছে। সাপ তাঁর গাড়িতে প্রায়ই ঢুকে পড়ে। চন্দ্রশেখর অনায়াসে তাদের ধরে আবার জঙ্গলে ছেড়ে দেন।
রাতে বা কোনও সময় বিশ্রামের প্রয়োজন হলে অ্যাম্বাসেডরের দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। বাকি সময় কাছের একটি নদীতে স্নান করা, নিজের খাবার রেঁধে নেওয়া আর রেডিও শোনা। এই চন্দ্রশেখরের কাজ।
আর আছে একটি ভাঙাচোরা সাইকেল। যাতে চড়ে যা প্রয়োজন পড়ে কাছের একটি গ্রাম থেকে নিয়ে আসেন চন্দ্রশেখর। সেখানে বেচে আসেন গাছের ডালপালা দিয়ে তৈরি ঝুড়ি। এতেই দিব্যি কেটে যাচ্ছে তাঁর জীবন।
লকডাউনের দিনগুলো গ্রামে না গিয়ে জঙ্গলের ফল খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছিলেন। বেড়ে ওঠা দাড়িগোঁফ, একরাশ চুল, একটু উস্কোখুস্কো চেহারার চন্দ্রশেখর কিন্তু খুব আস্তে আস্তে কথা বলেন। তবে মনের দিক থেকে দৃঢ়।
চন্দ্রশেখর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ১৭ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। বাকি জীবনটাও জঙ্গলেই কাটিয়ে দেবেন। ফিরবেন যদি তাঁর জমি তিনি ফের ফেরত পান।
এখন কর্ণাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলার নেক্কাড়ে গ্রামের কাছের জঙ্গলে খোশমেজাজেই দিন কাটান চন্দ্রশেখর। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা