স্ত্রীকে কাঁধে নিয়ে হাসপাতালে, দেহ কাঁধে ফের গ্রামে, জুটল না এতটুকু সাহায্য
একবিংশ শতাব্দীর দেশে আজও দারিদ্র আর দরিদ্রের যন্ত্রণা লাঘব করার কোনও সরকারি সাহায্য পাওয়া যায়না। ফের তারই এক মর্মভেদী দৃশ্য নজর কাড়ল।
স্ত্রীর অসুস্থতা বেড়ে গিয়েছে। তাঁকে চিকিৎসককে দেখানোর প্রয়োজন। কিন্তু কোথায় কি! প্রত্যন্ত গ্রাম ছাড়িয়ে বহু দূরে হাসপাতাল। নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যানবাহন আছে তার খরচ দেওয়ার সামর্থ্য কৃষ্ণ কুমারের নেই।
হত দরিদ্র এই পরিবারের কি তবে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ারও কোনও অধিকার নেই? সে অন্য প্রশ্ন। কৃষ্ণ কুমার যখন দেখেন স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেই হবে তখন তিনি কোনও উপায় না দেখে স্ত্রীকে কাঁধে তুলে নেন।
তারপর তাঁকে কাঁধে নিয়ে হাঁটা লাগান হাসপাতালের উদ্দেশে। বিহারের বৈশালীর রামধৌলি গ্রাম থেকে রওনা দিয়ে কৃষ্ণ কুমার স্ত্রীকে কাঁধে নিয়ে এসে পৌঁছন হাজিপুর সদর হাসপাতালে।
কাঁধে স্ত্রীকে নিয়ে এতটা পথ অতিক্রম করে ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে পড়েন কৃষ্ণ কুমার। কিন্তু হাল ছাড়েননি। তিনি স্ত্রীকে কাঁধে চাপিয়েই হাজির হন জরুরি বিভাগে। সেখানে চিকিৎসক ওই মহিলাকে পরীক্ষার পর জানিয়ে দেন তাঁর অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে।
কার্যত দীর্ঘ পথ স্ত্রীর দেহ কাঁধেই হাসপাতালে পৌঁছন কৃষ্ণ কুমার। তারপর যখন জানতে পারেন স্ত্রী আর নেই, তখন আরও ভেঙে পড়েন।
আর তাঁর শরীর সঙ্গ দিচ্ছিল না। তাই বারবার হাসপাতালের কাছে একটি অ্যাম্বুলেন্স চান যাতে তাঁর স্ত্রীর দেহ সৎকারের জন্য তিনি গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
কৃষ্ণ কুমারের দাবি অনেক চেষ্টা করেও হাসপাতাল তাঁর স্ত্রীকে গ্রামে ফেরানোর গাড়ি দেয়নি। অগত্যা দীর্ঘ অপেক্ষার পর নিজেই ফের স্ত্রীর দেহ কাঁধে রওনা দেন গ্রামের দিকে। গ্রামে ফিরে স্ত্রীর দেহ নিয়ম মেনে সৎকারও করেন।
এদিকে তিনি যখন হাসপাতাল থেকে স্ত্রীর দেহ কাঁধে বার হচ্ছিলেন তখন এক ব্যক্তি পুরো বিষয়টি জেনে ছবি সহ বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন। এতে বিষয়টি নজরে এসে পড়ে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বিষয়টিতে হাত ধুয়ে ফেলেছে। তাদের সাফাই কৃষ্ণ কুমারকে তারা অপেক্ষা করতে বলেছিল। কিন্তু তিনি অপেক্ষা না করে কাঁধে দেহ নিয়েই রওনা দেন।
এই ঘটনা কিন্তু ফের একবার দেশের অনেক জায়গার জরাজীর্ণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভয়ংকর ছবিটা সকলের সামনে তুলে ধরল। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা