ভিখারির সাজে ফেরা হারানো ছেলে আসলে ঠগ, ৪১ বছর পর উন্মোচিত হল সত্য
সম্পত্তির লোভে ধনী ব্যক্তির হারানো ছেলে সেজে আসে প্রায় একই রকম দেখতে ঠগ। এমন তো সুপারহিট সিনেমায় একাধিকবার দেখা গেছে। বাস্তবের এক ঘটনা তার চেয়েও টানটান।
এ ঘটনার সূত্রপাত ১৯৭৭ সালে। এক ধনী পরিবারের ছেলে কানহাইয়া সিং গিয়েছিল পরীক্ষা দিতে। কিন্তু সে ছেলে আর ফিরে আসেনি। থানা পুলিশ, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
পুত্রশোক ভুলতে পারেননি বাবা মা। সেই কষ্ট বুকে করেই কোনওক্রমে বেঁচেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ১৯৮১ সালের ফের সব বদলে গেল। বিহারের নালন্দা জেলার মোরগাওয়া গ্রামের বাসিন্দারা দেখেন তাঁদের গ্রামে এক তরুণ ভিক্ষা করতে এসেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা চাইছে সে।
তাকে নাম জিজ্ঞাসা করা হলে সে জানায় তার নাম কানহাইয়া সিং। গ্রামের মানুষ চমকে ওঠেন। খবর যায় কানহাইয়ার বাবা কমলেশ্বর সিংয়ের কাছে। তিনি ছুটে আসেন সেখানে। তাঁকে দেখেই পাপা বলে সম্বোধন করে সেই ভিখারি।
তাকে টুকটাক বেশ কিছু প্রশ্ন করেন কমলেশ্বর। সব উত্তরই ঠিক দেওয়ায় কমলেশ্বরের স্থির বিশ্বাস জন্মায় যে অবশেষে তিনি তাঁর হারানো ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন। সেই ভিখারি ছেলের জায়গা হয় সিং পরিবারে।
এদিকে কমলেশ্বরকে বোঝাতে পারলেও কানহাইয়ার মা রামসখী দেবীর সন্দেহ হয়। তিনি সাফ জানান যে তাঁর ছেলেকে তিনি চেনেন। এ ছেলে তাঁর ছেলে কানহাইয়া নয়।
কানহাইয়ার শরীরে যে দাগ ছিল তা এর গায়ে নেই। যদিও কমলেশ্বর তা মানতে চাননি। ফলে ওই ধনী পরিবারেই থেকে যায় ওই ছেলে। রামসখী দেবী অবশ্য ছেড়ে দেননি। তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন।
এরমধ্যে রামসখী দেবীর মৃত্যু হয়। তখন তাঁর মেয়ে বিদ্যা সিং মায়ের করা মামলা এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। এরমধ্যে কমলেশ্বর সিংয়েরও মৃত্যু হয়।
নালন্দা আদালত জানিয়ে দেয় কমলেশ্বরের ছেলে হিসাবে সম্পত্তি কানহাইয়া সিং হয়ে ফিরে আসা ব্যক্তির। সম্পত্তি হাতে পেলেও বিদ্যার সঙ্গে তার লড়াই কিন্তু চলতে থাকে।
এদিকে নালন্দা আদালত ওই ব্যক্তিকেই কানহাইয়া বলে মেনে নেওয়ার পর বিদ্যা সিং পাটনা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেখানেও ওই ব্যক্তিকেই কানহাইয়া সিং বলে মান্যতা দেওয়া হয়।
বিদ্যা সিং হাল ছাড়েননি। তিনি এরপর সুপ্রিম কোর্টে যান। সুপ্রিম কোর্ট জানায় এই পুরো বিষয়টায় বেশ কিছু প্রশ্ন থাকছে। তাই বিষয়টি ভাল করে খতিয়ে দেখা হোক। মামলা ফেরত যায় নালন্দা আদালতে। সেখানে ফের শুনানি শুরু হয়।
মাস তিনেক আগে এসিজেএম এই মামলার শুনানি দৈনিক ভিত্তিতে দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন। তার ভিত্তিতে ফের শুনানি শুরু হয়।
কমলেশ্বরের ২০০ কোটি টাকার কমপ্লেক্স রয়েছে। ১৫০ বিঘা জমি রয়েছে। নিজের বিশাল বাড়ি রয়েছে। স্থাবর অস্থাবর মিলিয়ে নেহাত কম নয় তাঁর সম্পত্তি। তার অধিকার তাঁর ছেলের পাওয়া উচিত।
কিন্তু যে ব্যক্তি নিজেকে কানহাইয়া বলে পরিচয় দিচ্ছে সে সত্যিই কানহাইয়া তো? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় ওই ব্যক্তিকে।
এর মধ্যেই বিদ্যা সিংয়ের আইনজীবী নানা প্রমাণ পেশ করেন আদালতে। যা প্রমাণ করে দেয় যে ওই ব্যক্তি মোটেও কানহাইয়া সিং নন। তার নাম দয়ানন্দ গোঁসাই। সে জামুই জেলার বাসিন্দা। যে কানহাইয়া সেজে আসলে কমলেশ্বরের সম্পত্তি হাতাতে চাইছে।
আদালত যখন ওই ব্যক্তিকে প্রশ্ন করে যে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত হারানো অবস্থায় সে কোথায় ছিল তার কোনও সদুত্তর দয়ানন্দ দিতে পারেনি। অবশেষে সব পরিস্কার হয়ে যায়। ৪১ বছর কানহাইয়া সিং সেজে থাকার পর অবশেষে আদালত দয়ানন্দ গোঁসাইকে জেলে পাঠিয়েছে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা