লোকজন পাগল বলত, স্ত্রী ছেড়ে চলে যান, সেই মানুষটাই এখন হিরো
তিনি লক্ষ্য স্থির রেখেছিলেন। তাও নিজের জন্য নয়। গোটা এলাকার জন্য। মানুষের কাজে লাগার কাজে নামার পর তাঁকেই শুনতে হয়েছে তিনি পাগল। তিনিই আজ এলাকার হিরো।
মানুষ যদি সঠিক উদ্দেশ্য এবং দূরদর্শিতায় ভরসা রেখে লক্ষ্যে স্থির থাকেন, তবে তাঁকে একদিন না একদিন মানুষ চিনতে পারেন। তাঁকে নিয়ে ধন্য ধন্য করেন। কিন্তু তার আগের পথ যে কতটা কাঁটা বিছানো হয় তা এখন ৭২ বছরে পৌঁছনো এই মানুষটিকে না দেখলে বোঝা যায়না।
সময়টা ১৯৭৫ সাল। সে সময় তাঁকে একটি খাল কাটার কাজে নিজে যান এক ঠিকাদার। কিন্তু সেখানে পারিশ্রমিক ঠিকঠাক না পাওয়া এবং খারাপ ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি ফিরে আসেন নিজের গ্রামে।
সেখানে বাড়ির পাশের একটি ছোট্ট পুকুর থেকে জল নিয়ে নিজের জমিতে চাষ শুরু করলে ওই পুকুরের মালিক আপত্তি জানান। সেই দিনটাই ছিল তাঁর জীবনের এক স্মরণীয় দিন। ওইদিনই তিনি স্থির করেন কারও ভরসায় নয়, তিনিই গ্রামের সকলের জন্য একটি পুকুর খনন করবেন।
এলাকায় জলাভাব ছিল। চাষাবাদেও সমস্যা হত। কিন্তু শুকনো জমিতে এভাবে দিনের ৩-৪ ঘণ্টা কোদাল চালিয়ে চলা চুম্বরু তামসয়কে দেখে স্থানীয় মানুষজন হাসাহাসি শুরু করেন। তাঁকে সকলে পাগলও বলতেন। কিন্তু তামসয় কারও কথা কানে তোলেননি।
বরং যেদিন সকালে পুকুর কাটার কাজ করতে পারতেন না সেদিন ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলার মানুষটি রাতে কাঠ জ্বালিয়ে পুকুর কাটার কাজ করতেন।
এরমধ্যেই তাঁর বিয়ে হয়। এক সন্তানও আসে তাঁদের সংসারে। ভেবেছিলেন কেউ না বুঝুক তাঁর এই পুকুর কাটার লক্ষ্যে স্ত্রী তাঁর পাশে থাকবেন। কিন্তু তা হল না।
বরং স্ত্রীর কাছেও তামসয়ের এই পুকুর কাটা একটা পাগলামো ছাড়া আর কিছুই ছিলনা। একসময় স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলেও যান। ঘর বাঁধেন অন্য এক পুরুষের সঙ্গে। এই ধাক্কার পরও কিন্তু নিজের ওপর বিশ্বাস হারাননি তামসয়। তিনি তাঁর পুকুর কাটার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
এমন করে কয়েক বছরের টানা পরিশ্রমে তিনি একাই একটি ছোট্ট পুকুর কেটে ফেললেন। কিন্তু সেখানেই থামেননি তামসয়। ওটুকু পুকুরে যে গোটা গ্রামের মানুষের জলের সমস্যা মিটবে না তা তিনি জানতেন। তাই পুকুর বড় করার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
জীবনের ৪৫টা বছর তামসয় দিয়ে দেন এই পুকুর কাটার কাজে। অবশেষে ১০০ বাই ১০০ ফুটের একটি বিশাল পুকুর তিনি কেটে ফেলেন। যার গভীরতা ২০ ফুট। যেখানে সারাবছর এখন জল থাকে। সেই পুকুরে মাছ চাষ হয়।
একটা মানুষের একার লড়াই এখন গ্রামের জলাভাব সম্পূর্ণ মুছে দিয়েছে। আজ ৭২ বছর বয়সে এসে তামসয় এখন গ্রামের হিরো। যাঁরা এতদিন তাঁকে পাগল বলে এসেছেন তাঁরাই এখন তাঁর কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা