দেশের মুকুটে অনন্য সম্মান জুড়ল প্রাণ বাঁচানো সিল্কের হাত ধরে
নিজেকে সাজিয়ে তোলার জন্য কোনও প্রাণির জীবন কেড়ে নেওয়া কখনওই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। এ দেশে বহুদিন ধরে চলে আসা সে উপায় এনে দিল বিরল সম্মান।
সিল্কের পোশাক তো সকলেই পছন্দ করেন। সিল্কের শাড়ি মহিলাদের অন্যতম পছন্দ। এছাড়া পুরুষদের পাঞ্জাবী সহ নানা পোশাক সিল্ক দিয়ে তৈরি হয়। সিল্ক কাজে লাগে আরও নানা কাপড় তৈরি করতে। কিন্তু সিল্ক তৈরির একটি খারাপ দিক হল গুটির মধ্যে থাকা ছোট্ট মথের জীবন কেড়ে নেওয়া।
কারণ যে গুটি থেকে সিল্ক তৈরি হয় তা থেকে সিল্ক বার করতে গিয়ে ওই শিশু মথের জীবন যায়। কিন্তু ভারতের অসমে এমন এক পদ্ধতি রয়েছে যাতে ওই ছোট্ট পোকাটিকে বাঁচিয়েই সিল্ক বার করে নেওয়া হয়। যা পরিচিত ইরি সিল্ক নামে। এই বিশেষ ধরনের সিল্ক পাওয়া যায় গুটি থেকেই। কিন্তু গুটির মধ্যে থাকা প্রাণিটিকে বাঁচিয়ে রেখে।
অসমে এই বহুদিন ধরে চলে আসা ইরি সিল্ক কীভাবে পাওয়া যায় সেটা একটু বলে নেওয়া যাক। প্রথমে সাদা, নরম এবং বেশ ফোলা গুটিগুলি বেছে সেগুলির মুখের দিকটি খুলে ভিতরে বেড়ে ওঠা পোকাটিকে বার করে দেওয়া হয়।
এবার গুটির বাকি খোলসটি সিল্ক বার করার জন্য নিয়ে নেওয়া হয়। পোকাটিকে আগে যত্ন করে বার করে দেওয়া হয়, তার কোনও ক্ষতি না করে। এবার সেই গুটিগুলিকে একটি মসৃণ কাপড়ে বেঁধে সাবান জলে ফোটানো হয়।
ফোটানোর পর সাবান জল ঠান্ডা পরিস্কার জলে ধুয়ে ফেলে প্রতিটি গুটিকে টানটান করে শোকানো হয়। তারপর তার থেকে লম্বা করে সিল্কের কাঁচা সুতো বার করা হয়। সেগুলিকে আবার হলুদ, লোহাচুরের মত নানাধরনের প্রাকৃতিক রংয়ে ফোটানো হয়।
রং ধরলে সেগুলিকে ফের রোদে শুকিয়ে নিয়ে তারপর তা থেকে সুতো গোল করে গুটিয়ে নেওয়া হয়। অবশেষে সেই সুতো দিয়ে তৈরি হয় নানা সিল্কের পোশাক। এই পদ্ধতিতে প্রাণিটিও বাঁচে, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা হয়, পরিবেশ বন্ধু হয়, আবার সিল্করে সুতোও পাওয়া যায়।
অসমের এই বহুল পরিচিত ইরি সিল্ক এবার পেল জার্মানির ওয়েকো টেক্স ট্যাগ। যা পৃথিবীজুড়ে বিরল সম্মান হিসাবেই সকলের জানা। এটা ভারতের মুকুটে অবশ্যই এক নতুন পালক সন্দেহ নেই। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা