শতাধিক যুবক তল্লাট জুড়ে অষ্টপ্রহর পরিস্কার করে চলেছেন, কারণটা বেশ চমকপ্রদ
পাহাড় ঘেরা এলাকা। অপার সবুজের হাতছানি। সেখানকার বাসিন্দা শতাধিক যুবক ঝাঁটা হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সর্বক্ষণ। ২৪ ঘণ্টায় বিরাম নেই তাঁদের।
সারি সারি পাহাড়। চারিদিকে সবুজ অরণ্য। প্রকৃতি এখানে প্রাণ ভরে উজাড় করে দিয়েছে তার অপার শোভা। এমন জায়গা মানে তো পরিচ্ছন্নই। তবু সেখানেই শতাধিক যুবক ঝাঁটা সহ সাফ সাফাইয়ের নানা সরঞ্জাম হাতে নেমে পড়েছেন।
তাঁরা পালা করে সাফাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাও আবার প্রায় পুরোদিনই চলছে তাঁদের এই পরিচ্ছন্নতার কর্মযজ্ঞ। এমনটা ভাবা ভুল হবে যে এটা কোনও পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ পালন হচ্ছে বা এটা কোনও সরকারি কর্মসূচি। একেবারেই তা নয়।
বরং এটা একটা উৎসবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। হর্নবিল উৎসব। ভারতে বহু উৎসব হয়ে চলে। তবে ভারতের উৎসব মানচিত্রে জায়গা পায় কয়েকটিই। তার একটি হল উত্তরপূর্ব ভারতের হর্নবিল উৎসব। নাগাল্যান্ডের এই উৎসবের খ্যাতি জগত জোড়া।
সেই হর্নবিল উৎসবে এবার হাজির হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। ১০ দিন ব্যাপী এই উৎসবে এবার উৎসবের শুরুতেই প্রায় ২ হাজার বিদেশি পর্যটক হাজির হয়েছেন। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও এই উৎসব দেখতে হাজির হয়েছেন ২৬ হাজার মানুষ।
বাকি নাগাল্যান্ডের বিভিন্ন অংশ এবং আশপাশের রাজ্যগুলি থেকে মানুষ ভিড় জমিয়েছেন এই প্রাচীন সংস্কৃতির আয়না হয়ে প্রতিবছর আসর জমিয়ে তোলা এই উৎসবে। লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে তাই নাগা হেরিটেজ ভিলেজ হিসাবে খ্যাত কিসামা গ্রামে দূষণ ছড়াচ্ছে।
প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে নানা জিনিস ফেলে যাচ্ছেন পর্যটকেরা। এসব দ্রুত সাফ করে কিসামার সৌন্দর্য অটুট রাখতে মাঠে নেমেছেন কয়েকশো স্থানীয় যুবক। তাঁরাই এই পর্যটকদের ভিড়ে ঠাসা হর্নবিল উৎসবের জেরে ছড়ানো আবর্জনা দ্রুত সাফ করে ফেলছেন। চারপাশকে নোংরা হতে দিচ্ছেন না।
১৭টি নাগা উপজাতি এবং উত্তরপূর্ব ভারতের নানা জনজাতির মানুষ এই উৎসবে শামিল হন। উৎসব প্রাঙ্গণে নাচ, গান, বাজনা ও নাগাল্যান্ডের প্রাচীন পরম্পরাকে তুলে ধরা হয়। তার সঙ্গে প্রদর্শিত হয় নাগাল্যান্ডের নানা জনজাতির আদি পোশাক। দেখা যায় তাঁদের নিজস্ব বাজনা।
নাগাল্যান্ডের মাটির গন্ধ লুকিয়ে থাকে এই হর্নবিল উৎসবে। এখানকার নানা রূপকথা ও লোকমুখে ঘোরা নানা কাহিনিতে হর্নবিল নামে এক বড় চেহারার পাখির উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই পাখির নামেই এই উৎসবের নামকরণ হয়েছে হর্নবিল। প্রতিবছর ডিসেম্বরের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত কিসামা গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় এই হর্নবিল উৎসব। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা