ট্রাভেল এজেন্টের প্রতারণায় ভিন দেশে ২২ বছর কাটিয়ে দেশে ফিরলেন মহিলা
যাওয়ার কথা ছিল কোথায় আর ট্রাভেল এজেন্ট তাঁকে নিয়ে গিয়ে ফেললেন কোথায়। তা এখনও ওই মহিলার কাছে এক দুঃস্বপ্ন।
ভাবতেও পারেননি তিনি কখনও তাঁর দেশে ফিরতে পারবেন। তাঁর ৪ মেয়ের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে। নিজের দেশের মাটির গন্ধ পাবেন। তাঁর কাহিনি কোনও সিনেমার চেয়ে কম নয়।
সালটা ছিল ২০০২, সে সময় তিনি রান্নার কাজ করতেন। স্বামীহারা ওই মহিলা তাঁর মেয়েকে বড় করে তুলছিলেন এই রান্না করে রোজগার করা অর্থে। একটু অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি এক ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে কথা বলেন। দুবাইতে রান্নার কাজে যোগ দিতে চান।
সেই ট্রাভেল এজেন্টও তাঁকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু দুবাই নয়, ওই ট্রাভেল এজেন্ট হামিদা বানু নামে ওই মহিলাকে নিয়ে যায় পাকিস্তানে। সেখানে তো কোনও রান্নার কাজ নেই। পাকিস্তানে কেন?
এর উত্তর আর পাননি হামিদা বানু। পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের হায়দরাবাদে তিনি তখন একা। কোথায় যাবেন, কি করবেন কিছুই তাঁর জানা নেই। জীবনে অন্ধকার নেমে আসে।
এমন এক পরিস্থিতিতে হায়দরাবাদের এক ব্যক্তি তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান। তিনি হামিদাকে বিয়েও করতে চান। বিদেশে কেউ চেনা নেই। একজন মানুষকে আঁকড়ে ধরায় না করেননি হামিদা। ওই ব্যক্তিকে বিয়ে করে দিন গুজরান করতে থাকেন।
এভাবে দিন কাটছিল। ভারতের মুম্বই শহরের বাসিন্দা হামিদা প্রতিদিন চাইতেন দেশে ফিরতে। কিন্তু চাইলেও নিজেকে প্রায় বুঝিয়ে ফেলেছিলেন এ জীবনে তাঁর আর দেশে ফেরা হবেনা।
১২ বছর ওই ব্যক্তির সঙ্গে বৈবাহিক জীবন কাটানোর পর ফের স্বামীকে হারান হামিদা। আবার একা। ততদিনে অবশ্য পাকিস্তানে থাকার অভ্যাস তাঁর হয়েছে। কিন্তু মন প্রতিদিন চায় দেশে ফিরতে।
২০২২ সালে এক পাকিস্তানি ইউটিউবার হামিদা বানুর কাহিনি তুলে ধরেন। অনেকে তাঁর কথা জানতে পারেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পাকিস্তান সরকারের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁকে ভারতে ফেরানোর উদ্যোগ শুরু হয়।
এতদিনে সব প্রক্রিয়া পূর্ণ করে হুইল চেয়ারে দেশে ফিরলেন বৃদ্ধা হামিদা বানু। ২২ বছর বাইরে কাটিয়ে তারপর দেশে ফিরে আনন্দে আত্মহারা বৃদ্ধা হামিদা। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা