দাদা সমীরের বয়স ১১ বছর। তারপর বোন সিমরন। বয়স ৮। আর তাদের ছোট ভাই সমর। তার বয়স সবে ৩। হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র জেলার সারসা গ্রামের মালিক পরিবারের এই ৩ খুদে সদস্যের গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ পুলিশ উদ্ধার করেছে গ্রাম থেকে বহু দূরে মোরনির গহন অরণ্যে। ঘটনায় ৩ ভাইবোনের বাবা ও কাকাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখনও মা আর ঠাকুমাকে ৩ সন্তানের মৃত্যুর খবর জানানোর সাহস করে উঠতে পারছেন না পরিবারের অন্য সদস্যরা। সূত্রের খবর, মৃত ভাইবোনের ঠাকুরদার দাবি, ৩ সন্তান থাকতেও দ্বিতীয় বিয়ে করতে চেয়েছিল ছেলে। তাতে বাধ সেধেছিল পরিবার। ৩ সন্তানের মুখ চেয়ে অন্তত সেই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ করেছিলেন সবাই। ছেলের এই দ্বিতীয় বিয়ের নাছোড় ইচ্ছাকেই এই ঘটনার জন্য কাঠগড়ায় চাপাচ্ছেন ঠাকুরদা।
পুলিশ জানিয়েছে, গত রবিবার ৩ ভাইবোন একসঙ্গে খেলতে যাচ্ছিল। রাস্তায় গাড়ি নিয়ে তাদের পিছু পিছু যায় তাদের কাকা বছর ২৬-এর জগদীপ মালিক। তারপর তাদের গীতা মহোৎসব দেখাতে নিয়ে যাবে বলে গাড়িতে তুলে নেয়। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে গাড়ি এগোয় মোরনি জঙ্গলের দিকে। দীর্ঘক্ষণের পথ। কিন্তু তাতে কি? সমীর, সিমরনরা জানে তারা তাদের কাকার সঙ্গে সফর করছে। পঞ্চকুলার মোরনি জঙ্গলের এক পাণ্ডববর্জিত জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় কাকা জগদীপ। তারপর গাড়ির মিউজিক সিস্টেমের আওয়াজ খুব জোরে করে দেয়। এরপর সমীরকে নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে যায় সে। সেখানেই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে ভাইপোকে গুলি করে ফিরে এসে সিমরনকে নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে যায়। তারপর সিমরনেরও একই দশা করে ছোট্ট সমরকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে আরও একটু এগিয়ে যায় জগদীপ। সেখানে ৩ বছরের ভাইপোকেও গুলি করে হত্যা করে জঙ্গলে ফেলে নির্বিকার চিত্তে বাড়ি ফিরে আসে কাকা। এদিকে দীর্ঘক্ষণ বাড়ি না ফেরায় বাচ্চাদের খোঁজ শুরু হয়। গ্রামের লোকজন তন্নতন্ন করে খুঁজেও তাদের না পেয়ে বাবা সনু মালিককে খবর দেন। সনু মালিক তখন তার ফোটোর দোকানে। তাকেও ডেকে আনা হয়। এরপর পুলিশের সঙ্গে রাত পর্যন্ত চলে খোঁজ। সেই খোঁজে সনু ও জগদীপও ছিল। এমনকি বাচ্চাদের না পাওয়া গেলে তারা ধর্না শুরু করবে বলেও পুলিশকে হুমকি দেয় জগদীপ।
পরদিন কিন্তু নিখোঁজ ছেলেমেয়ের বাবার ভাবগতিক সুবিধের ঠেকেনা পুলিশের। যার ছেলে মেয়ে একদিন হল নিখোঁজ তার চোখ মুখ এমন নিরুত্তাপ কেন? পুলিশের সন্দেহ হয়। এরপর কিছু সূত্র পেয়ে গত সোমবার মধ্যরাতে বাবা সনু ও কাকা জগদীপকে আটক করে পুলিশ। থানায় এনে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। তখনই পুলিশের সামনে ভেঙে পড়ে কাকা। খুলে বলে কীভাবে ২ ভাইপো ও ভাইঝিকে খুন করেছে সে। পুরো ঘটনা দাদা সনুর নির্দেশেই হয়েছে বলেও পুলিশের কাছে দাবি করে জগদীপ। পরদিন জগদীপকে নিয়ে মোরনি জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়ে সমীর, সিমরান ও সমরের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দ্বিতীয় বিয়ে করতেই সন্তানদের সরিয়ে দেওয়ার মতলব, নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। আপাতত বাবা, কাকা দুজনেই পুলিশের হেফাজতে।