ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। এই আপ্তবাক্যকে সত্য প্রমাণ করে দেখালেন শতবর্ষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো রাজকুমার বৈশ্য। জীবনের মাঠে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরি হাঁকাতে আর মাত্র ২ রান দরকার ৯৮-এর রাজকুমার বৈশ্যর। তার আগেই শিক্ষাক্ষেত্রে সাম্মানিক ডিগ্রি অর্জন করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিলেন তাঁর ‘বুড়ো’ মস্তিষ্কের মেধার জোর।
৪০-এর দশকে আইন নিয়ে পাশ করার পর রাজকুমারের ইচ্ছা ছিল স্নাতকোত্তর করবেন। কিন্তু তখনই পূর্বতন বিহারের ও বর্তমান ঝাড়খণ্ডের কোডার্মায় অবস্থিত ক্রিশ্চিয়ান মাইকা সংস্থায় আইনজীবী হিসেবে চাকরি পেয়ে যান তিনি। সংসারের দায়িত্ব নিতে অগত্যা উচ্চশিক্ষা লাটে তুলে কর্মজীবন শুরু করেন যুবক রাজকুমার বৈশ্য। কিন্তু কাজ করার ফাঁকে উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করতে না পারার খেদ দিনরাত তাড়া করে বেড়াত তাঁকে। একসময় স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করার জেদ চেপে বসে। চাকরি জীবন থেকে অবসর নেওয়ার পরও তাঁকে কুড়ে কুড়ে খেত স্নাতকোত্তর পাশ করার প্রবল ইচ্ছা। আর কথায় বলে ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। ২০১৫ সালে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর লেখাপড়া শুরু করেন ৯৮ বছরের প্রবীণ। যার জন্য লিমকা বুক অব রেকর্ডসে নাম ওঠে তাঁর। টানা ২ বছর একনিষ্ঠ ছাত্রের মতো পড়াশোনায় মনপ্রাণ ঢেলে দেন রাজকুমার বৈশ্য।
বয়স হলে নাকি স্মৃতি দুর্বল হয়ে যায়। সে কথাকে ভুল প্রমাণ করে দিতে মঙ্গলবার নালন্দা মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশতম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন ৯৮ বছরেও তরতাজা রাজকুমার বৈশ্য। অনুষ্ঠানে মেঘালয়ের রাজ্যপালের হাত থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির শংসাপত্র গ্রহণ করে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত তিনি।
জীবন সায়াহ্নে এসে অধিকাংশ মানুষ ঘরের কোণে ঈশ্বরনাম করতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। সেখানে অদম্য ইচ্ছাশক্তির অধিকারী প্রবীণ রাজকুমার বাধ্য ছাত্রের মতো স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করলেন। এমন ছাত্রকে তাই কুর্নিশ জানাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেননি তাঁর আত্মীয় পরিজন থেকে শুরু করে শিক্ষাজগতের বিশিষ্টজনেরা।
(ছবি – সৌজন্যে – ট্যুইটার)