National

নিঝুম রাতের বিভীষিকা!

হরিয়ানার পালওয়াল। জানুয়ারির শুরু। এসময়ে মধ্যরাতে দেশের এই প্রান্তে ঠান্ডা বিষাক্ত কামড় বসায়। সঙ্গে কুয়াশার চাদর আগ্রাসী চেহারা নিয়ে লেপটে থাকে সর্বত্র। এমন রাতে শুনশান রাস্তায় কোনও মানুষের দেখা মেলে না। কিন্তু গত সোমবার রাত ২টোয় কনকনে ঠান্ডার শুনশান রাজপথে সাক্ষাৎ বিভীষিকার মত বার হয়েছিল নরেশ ধানকর। মধ্যবয়সী পুরুষ। প্রাক্তন সেনাকর্মী। ওই রাতে হাতে একটা লোহার মোটা রড হাতে সে হাজির হয় পালওয়াল হাসপাতালের সামনে। এর আধঘণ্টা পর একটা ফোন আসে পুলিশের কাছে। রাত আড়াইটেয় আসা সেই ফোনে জানানো হয় পালওয়াল হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তির দেহ পড়ে আছে। মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এর কিছুক্ষণ পরই আবার ফোন। এবার পালওয়াল হাসপাতাল থেকে। সেখানে অঞ্জুম নামে এক রোগিণীর মাথায়ও একই রকম আঘাত। তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় হাসপাতালের শৌচাগারে। পরপর এই ২টি খবরে শীতঝিমুনি ছেড়ে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। হাসপাতাল থেকে একটি সিসিটিভি ফুটেজও হাতে পায় তারা। সেখানে এক ব্যক্তিকে রড হাতে ঘুরতে দেখা যায়। এরপরই চারদিকে সব চেক পোস্টকে সতর্ক করে পুলিশ। বিভিন্ন দিকে বেরিয়ে পড়ে পুলিশের পেট্রোলিং ভ্যান।

ফের ফোন আসে পুলিশের কাছে। আগ্রা রোড সংলগ্ন এলাকা থেকে খবর আসে একের পর এক মৃতদেহের। পরপর ৩টি। প্রত্যেকের মাথাতেই একই রকম আঘাতের চিহ্ন। এতটাই সজোরে তাঁদের মাথায় আঘাত করা হয়েছিল, যে ঘটনাস্থলেই মাথা ফেটে মৃত্যু হয় তাঁদের। এঁদের মধ্যে একজন পেশায় কাবারিওয়ালা। ষষ্ঠ দেহের খবর আসে ভোর ৪টে নাগাদ। যাঁর দেহ উদ্ধার হয় তিনি পেশায় নিরাপত্তাকর্মী। কর্মরত অবস্থায় তাঁকেও মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার খবরটি আসে রসুলপুর এলাকা থেকে। পুলিশ বুঝতে পারে খুনের ধরণ এক। ফলে সম্ভবত খুনিও একজনই। শুরু হয় খোঁজ। মাত্র ২ ঘণ্টায় যে ৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাকে ধরতে দেরি হলে সে আরও কতজনের প্রাণ নিতে পারে তা ভেবে প্রমাদ গোনে পুলিশও।


আরও কোনও খুন না করে বসে এই সিরিয়াল কিলার! পুলিশ তন্নতন্ন করে খোঁজ শুরু করে। অবশেষে রসুলপুরেই সকাল ৭টা নাগাদ লোহার রড হাতে নরেশ ধানকরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ যখন তাকে পাকড়াও করতে যায়, তখন পুলিশের দিকেও তেড়ে যায় নরেশ। কিছুটা ধস্তাধস্তিও হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের অনুমান, মধ্যবয়সী নরেশ মানসিক ভারসাম্যহীন। সে যাকেই সামনে পেয়েছে, কনকনে শীতের নিঝুম রাতে তাকেই তার শিকার বানিয়েছে। কোনও বাছবিচার না করেই। আপাতত শারীরিক পরীক্ষায় জন্য নরেশকে ফরিদাবাদের একটি হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ। রোমহর্ষক এমন ঘটনা গল্পের বইয়ের পাতায় পাওয়া যায়। টানটান উত্তেজনার কাহিনি অনেকে গোগ্রাসে গিলে ফেলেন। কিন্তু বাস্তবেই এমন সিরিয়াল কিলারের কাহিনি মঙ্গলবার গোটা এলাকার মানুষকে চমকে দিয়েছে। কিছুটা আতঙ্কিতও করেছে বৈকি।


Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button