দেশের শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্টে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে না। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় সঠিক হচ্ছে না। সেকথা বারবার দেশের প্রধান বিচারপতির কাছে তুলে ধরেও কোন কাজ হয়নি। তাই তাঁরা চাননা আজ থেকে ২০ বছর বাদে তাঁদের দিকে আঙুল তুলে কেউ বলুন এই ৪ বিচারপতি নিজের সত্ত্বা বিকিয়ে দিয়েছিলেন। এদিন নজিরবিহীন এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমনই দাবি করলেন বিচারপতি জে চেলামেশ্বর। তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করতে পাশে ছিলেন বাকি ৩ বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, এমবি লোকুর ও কুরিয়েন জোসেফ।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এমন ঘটনা এর আগে ঘটেনি। সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক কার্যকলাপ নিয়ে এভাবে প্রকাশ্যে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করতে আজ পর্যন্ত কোনও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে দেখা যায়নি। সেদিক থেকে এদিনের সাংবাদিক বৈঠক ঐতিহাসিক। এই মুহুর্তে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের পর সবচেয়ে সিনিয়র বিচারপতি জে চেলামেশ্বর। এদিন তাঁরই বাসভবনে হওয়া বৈঠকে তিনি নিজের ও বিক্ষুব্ধ বাকি ৩ বিচারপতির তরফে বক্তব্য রাখেন। এদিনের বৈঠক ঐতিহাসিক বলে মেনে নিয়ে তিনি বলেন, তাঁদেরও এই বৈঠক করতে ভাল লাগছে না। কিন্তু দেশবাসীর এগুলো জানার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তাঁরা। নাহলে গণতন্ত্রই সংকটের মুখে পড়বে। তাঁর দাবি, কয়েকমাস আগে তাঁরা ৪ জনেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নিজেদের সাক্ষরিত একটি চিঠি দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক বেশ কিছু বিষয় সঠিক পদ্ধতি মেনে হচ্ছে না বলে জানান। পরে তাঁদের কথা শুনে কিছু কাজ করা হয় ঠিকই, কিন্তু বেশ কিছু প্রশ্ন রেখে সে কাজ হয়। পরে তাঁরা ফের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে জানান সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক কাজে সংশোধন হওয়ার দরকার আছে। এমনকি শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করার আগেও তাঁরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন বলে দাবি করেন বিচারপতি জে চেলামেশ্বর। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আদালতের ৪ সিনিয়র বিচারপতির বক্তব্যকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিচারপতি জে চেলামেশ্বর দাবি করেন, দেশের প্রতি কর্তব্যের খাতিরেই তাঁদের সামনে আসতে হয়েছে। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখাতেই সংবাদমাধ্যমের সামনে পুরো বিষয়টা তুলে ধরার সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি।
কিন্তু ঠিক কি কি অভিযোগ তাঁদের? এ প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানান, সুপ্রিম কোর্টের মামলা বরাদ্দ সহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তাঁদের বক্তব্য রয়েছে। সেগুলি তাঁরা চিঠিতে পরিস্কারভাবে লিখেও দিয়েছেন। তাহলে কি তাঁরা এখন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ইমপিচমেন্ট চাইছেন? এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য হাতজোড় করে এড়িয়ে গেছেন বিচারপতি জে চেলামেশ্বর। বরং এই সিদ্ধান্ত দেশবাসীর হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের সদস্য ৪ সিনিয়র বিচারপতির এভাবে সামনে আসা কিন্তু স্ফুলিঙ্গটা জ্বালিয়ে দিল বলেই মনে করছেন অনেকে। এটা যে এখানেই শেষ হল না তাও মনে করছেন তাঁরা। এদিন বিচারপতিদের সাংবাদিক বৈঠকের পরই দ্রুত দেশের আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে ডেকে পাঠান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সাংবাদিক সম্মেলনের গুরুত্ব যে কতটা তা প্রধানমন্ত্রীর তলব থেকেই স্পষ্ট বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।