বাস ভর্তি লোক। সেদিকে ভ্রুক্ষেপমাত্র নেই। অভিযোগ, আপনমনে এক মহিলা সহযাত্রীর পাশে বসে হস্তমৈথুনে মজেছিলেন এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি। প্রতিবাদ করায় উল্টে পাশে বসা তরুণীকে শ্লীলতাহানি করার চেষ্টাও করেন তিনি। ওই ছাত্রীর অভিযোগ, চোখের সামনে এসব ঘটতে দেখেও বাসের অন্য যাত্রীরা চুপ করে যে যার সিটে বসেছিলেন। কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার সেই ‘ভয়াবহ’ অভিজ্ঞতাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জানান দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও দিল্লি পুলিশকেও সেই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা ‘ট্যাগ’ করতে ভোলেননি ওই ছাত্রী।
৭৭৪ নম্বর রুটের কমলা রঙের ক্লাস্টার বাসে উঠেছিলেন ওই ছাত্রী। নিজের সিটে বসে এক মনে বইয়ের পাতায় ডুবেছিলেন তিনি। ঘড়ির কাঁটা তখন বিকেল ৩টের ঘর ছুঁয়েছে। আচমকাই ছাত্রীটি অনুভব করেন, তাঁর বসার সিট কেমন দুলে দুলে উঠছে! চলন্ত বাসে সিট দুলে উঠবে কেন? একটু ঘাবড়েই যান ছাত্রীটি। তারপরই তিনি অনুভব করেন ওই পুরুষ যাত্রী তার কনুই দিয়ে ছাত্রীর কোমরের কাছে ধাক্কা মারছে। তবে তাঁর অবাক হওয়ার তখনও অনেক কিছু বাকি ছিল। তিনি বুঝতে পারেন পাশের সহযাত্রী কিছু একটা করছে। সরাসরি সেদিকে না তাকিয়ে ওই ছাত্রী তাঁর মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও করার সঙ্গে সঙ্গে দেখার চেষ্টা করেন পাশে বসা সহযাত্রী ঠিক কী করছেন! আর তা দেখে আঁতকে ওঠেন তিনি। মাঝবয়সী সহযাত্রী তাঁর পাশে বসেই হস্তমৈথুন করে চলেছে। বাসের লোকজন যাতে তা দেখতে না পান তার জন্য অন্যদিকে একটি ব্যাগ দাঁড় করিয়ে রেখেছে। লোকটির এমন নির্লজ্জ আচরণের বিরুদ্ধে তখনই প্রতিবাদে মুখর হন ওই ছাত্রী। অভিযোগ, প্রতিবাদ জানানোয় ওই মদ্যপ ব্যক্তি উল্টে তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। ছাত্রীর এতে অসুবিধা হলে তিনি বাস থেকে নেমে যেতে পারেন বলেও জানায় ওই ব্যক্তি।
ওই ছাত্রীর আক্ষেপ, ভরদুপুরে চোখের সামনে সেদিনের ঘটনা দেখেও চুপ করেছিলেন বাসের বাকি যাত্রীরা। যেন কিছুই হয়নি। এমনকি একটি মেয়ের শ্লীলতাহানির ঘটনাকে পাত্তা দিতেও আগ্রহ দেখাননি বাসের মহিলা যাত্রীরা। কুকীর্তি সেরে সেদিন নিশ্চিন্তেই দিল্লি আইআইটির গেটের কাছে নেমে যান ওই ব্যক্তি। এমনই বিস্ফোরক অভিযোগে ফেটে পড়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই পড়ুয়া। তাঁর দাবি, বাড়ি ফিরে পরিবারের লোকজনকে বাসের সব ঘটনার কথা খুলে বলেও লাভ কিছু হয়নি। লোকলজ্জার ভয়ে তাঁর আত্মীয়স্বজনও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর বিষয়ে ইতস্তত বোধ করেছিলেন সেদিন।
পরিবার বা সমাজের সাহায্য না পেয়ে অবশ্য দমে যাননি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী। সেদিন বাসের ভিতর হওয়া সমস্ত ঘটনা বুদ্ধি করে ফোনে রেকর্ড করে নিয়েছিলেন তিনি। সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দেন ছাত্রীটি। ভিডিওটিতে তিনি ‘ট্যাগ’ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং দিল্লি পুলিশকে। ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসে দিল্লি প্রশাসন। সাহসে ভর করে দিল্লি পুলিশের দ্বারস্থ হন ওই ছাত্রী। বাসে তাঁর সাথে হওয়া শ্লীলতাহানির কথা খুলে বলেন থানায় উপস্থিত পুলিশকর্মীদের।