National

স্ত্রীকে রোগমুক্ত করতে ‘সুপার ব্লু ব্লাড মুন’-এর রাতে নরবলি দিল স্বামী

গত ৩১ জানুয়ারি সমগ্র বিশ্ববাসীর কোটি কোটি চোখ ছিল আকাশের দিকে। অধীর অপেক্ষা ছিল গ্রহণকালে আকাশ জুড়ে সুপার ব্লু ব্লাড মুনের আবির্ভাবের মহাজাগতিক দৃশ্য চাক্ষুষ করার। সেই সুযোগের অপেক্ষায় বাকিদের মতই প্রতীক্ষা করছিল হায়দরাবাদের এক দম্পতি। যাদের মধ্যে ১ জন কেরুকোন্ডা রাজশেখর পেশায় ক্যাব চালক। তার স্ত্রী শ্রীলতা দীর্ঘ ৪ বছর ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছে।

স্ত্রীর শরীরের অবস্থা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিল রাজশেখর। অনেক ডাক্তার বদ্যি দেখিয়েও স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার সেভাবে কোনও উন্নতি হচ্ছিল না। তাই কুসংস্কারে বিশ্বাসী ওই ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত শরণাপন্ন হয় এক তান্ত্রিকের।


২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি তেলেঙ্গানার মেদারাম বলে একটি জায়গায় যায় রাজশেখর। সেইসময় সেখানে সাম্মাক্কা সারালাম্মা নামে একটি আদিবাসী উৎসব চলছিল। সেই উৎসবে এক তান্ত্রিকের সাথে আলাপ হয় ওই দম্পতির। স্ত্রীর ওপর অশুভ শক্তির প্রভাব আছে বলে সে সুস্থ হতে পারছে না বলে ওই দম্পতিকে জানায় সেই তান্ত্রিক। নরবলি দিলেই অশুভ শক্তির প্রভাব কেটে যাবে বলে তান্ত্রিক পরামর্শ দেয় দম্পতিকে। তান্ত্রিক স্বামী-স্ত্রীকে সুপার ব্লু ব্লাড মুনের আবির্ভাবের রাতে ১টি শিশুকন্যাকে বলি দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

পুলিশ জানিয়েছে, সেইমত গত ৩১ জানুয়ারি গভীর রাতে শিশু শিকার করতে রাস্তায় নামে রাজশেখর। সেকেন্দরাবাদের ভৈগুড়া এলাকা থেকে একটি শিশুকন্যাকে অপহরণ করে সে। ফুটপাথে ঘুমন্ত মা বাবার পাশ থেকে ৩ মাসের শিশুকন্যাকে তুলে গাড়ি নিয়ে সোজা সে পৌঁছে যায় জনহীন মুসি নদীর ধারে। রাত ২টো নাগাদ ছোট্ট মেয়েটির গলা ছুরি দিয়ে কেটে ধড় থেকে আলাদা করে দেয় সে। এরপর নদীতে ছুরি ও শিশুকন্যার মুণ্ডহীন শরীর ছুঁড়ে ফেলে দেয়।


শিশুর কাটা মাথা থেকে রক্তপাত বন্ধ হওয়া অবধি নদীর পাড়েই অপেক্ষা করে রাজশেখর। তারপর ওই মাথা নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে বসার ঘরে সস্ত্রীক কালো জাদুর হোম করা শুরু করে। হোম শেষ হওয়ার পর তান্ত্রিকের নির্দেশ মত কাটা মাথাটি বাড়ির ছাদের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে তারা রেখে দেয়। কাটা মাথার ওপর চাঁদ আর ভোরের সূর্যের আলো পড়লেই নাকি পুজো সার্থক হবে! চিরকালের জন্য রোগমুক্ত হবে রাজশেখরের স্ত্রী। খারাপ শক্তির প্রভাব থেকে চিরতরে মুক্তি পাবে সে।

ক্যাব চালক রাজশেখর পরের দিন অর্থাৎ ১ ফেব্রুয়ারি সকালে গাড়ি নিয়ে কাজে বেরিয়ে যায়। সংসারের কাজে রোজকারের মত মনোনিবেশ করে তার স্ত্রী। ছাদে যে মানুষের কাটা মাথা পড়ে আছে সেকথা বেমালুম ভুলে যায় তারা।

সকাল ১১টা নাগাদ ছাদে গিয়ে শিশুকন্যার কাটা মাথা দেখে আঁতকে ওঠেন রাজশেখরের শাশুড়ি। তিনি চিৎকার করে প্রতিবেশিদের ছাদে ডেকে আনেন। তাঁরাই সাথে সাথে খবর দেন পুলিশকে।

তদন্তে নেমে ওই দম্পতির ওপর সন্দেহ গিয়ে পড়ে পুলিশের। ছাদ ও বসার ঘরে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে তারা। শিশুকন্যাকে খুনের বিষয়ে ওই দম্পতির হাত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয় পুলিশ। তাদের জেরার মুখে গা শিউড়ে ওঠা সমস্ত ঘটনার কথা স্বীকার করে দম্পতি। নরবলি দেওয়ার অভিযোগে স্বামী স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়ে দেওয়া নারকীয় ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। অভিযুক্ত তান্ত্রিকের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button