সমস্ত বাধাবিঘ্ন ও পাপ বিনষ্ট করতে তৃতীয়ার দিন দেবীর পুজো করা হয়
দেবীর উপাসকেরা সিংহের মতো পরাক্রমী ও নির্ভয় হয়ে থাকে এঁর বাহন সিংহের কারণে। সমস্ত বাধাবিঘ্ন ও পাপ বিনষ্ট করে দেবী। অতি দ্রুত ও সদ্য ফলদায়ী হয়ে থাকে এই দেবীর আরাধনা।
রামচন্দ্র দুর্গাপুজোর পক্ষে অকাল বলেছিলেন শরৎকালকে, কেন? শরৎকাল, সূর্যের দক্ষিণায়ন। সমস্ত দেবদেবীর নিদ্রার সময়। অনন্যোপায় ভগবান ব্রহ্মা দেবী দুর্গাকে জাগরিত করলেন স্তবস্তুতি করে। দেবী তখন কুমারীর বেশে এসে ব্রহ্মাকে বললেন, বিল্বমূলে দুর্গার বোধন করতে। দেবীর আদেশ যথানিয়মে পালন করলেন পিতামহ ব্রহ্মা।
মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত নয়রাত্রি ব্যাপী দেবী দুর্গার নয়টি রূপ ও শক্তির যে আরাধনা করা হয় সেটিই নবরাত্রি ব্রত।
দেবী দুর্গার নয়টি রূপের নামকরণ করেছিলেন পিতামহ ব্রহ্মা। নয়টি নামের নয়টি বৈচিত্র্যময় রূপভেদ ও শক্তি। এঁরা প্রত্যেকেই দেবী দুর্গার নয়টি কায়াব্যূহ মূর্তি। এই নয়টি নামের উল্লেখ আছে শ্রীশ্রীচণ্ডীতে।
চন্দ্রঘণ্টা
নবরাত্রির তৃতীয় দিনে পূজার্চনা ও আরাধনা করা হয় দেবী চন্দ্রঘণ্টার। দেবী দুর্গার তৃতীয় শক্তির নামই চন্দ্রঘণ্টা। দেবীর গায়ের রং সোনার মতো উজ্জ্বল। অসাধারণ রূপবতী। মাথায় মুকুট। দেবী দশভুজা। দেবীর দশ হাত সুশোভিত পদ্মতীর, ধনুক, অভয়মুদ্রা, কমণ্ডলু, ত্রিশূল, বরাভয়, গদা, তলোয়ার, খড়্গ ইত্যাদিতে। বাহন সিংহ। দেবীর ভঙ্গি সর্বদা যুদ্ধোদ্যত। দুরাচারী দৈত্যদানব রাক্ষস প্রমুখ সদা সর্বদা প্রকম্পিত থাকে তাঁর ঘণ্টার মতো ভয়ানক চণ্ডধ্বনিতে। দুষ্টের বিনাশের জন্য দেবী সদা তৎপর ও উগ্র হলেও দর্শক ভক্ত ও আরাধনাকারীর কাছে স্বরূপে তিনি অত্যন্ত সৌম্য ও শান্ত।
দেবীর উপাসকেরা সিংহের মতো পরাক্রমী ও নির্ভয় হয়ে থাকে এঁর বাহন সিংহের কারণে। সমস্ত বাধাবিঘ্ন ও পাপ বিনষ্ট করে দেবী। অতি দ্রুত ও সদ্য ফলদায়ী হয়ে থাকে এই দেবীর আরাধনা।
দেবী দুর্গার তৃতীয় শক্তি চন্দ্রঘণ্টার উপাসনা বা আরাধনা করলে সদগুণপ্রাপ্তি হয়, সৌম্যভাব ও বিনম্রতার বিকাশ ঘটে তার মধ্যে। সাহস বাড়ে, নির্ভয় হয়। কান্তি বৃদ্ধি পায় ভক্তের সর্বাঙ্গে, কণ্ঠস্বরে সমাবেশ ঘটে এক দিব্যি ও অলৌকিক মাধুর্যের। শাস্ত্রীয় নিয়মে পবিত্রতার সঙ্গে দেবী চন্দ্রঘণ্টার শরণাগত হয়ে পুজো ও আরাধনা করলে সাংসারিক কষ্ট থেকে বিমুক্ত হওয়া যায় দেবীর করুণায়।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : ‘নবদুর্গা’ অনুবাদিকা গায়ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর। ছবি এঁকেছেন পরমেশ এবং বি.কে. মিত্র। এদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম ক্ষমা প্রার্থী হয়ে। সহায়ক গ্রন্থ শ্রীশ্রীচণ্ডী। এছাড়াও শাস্ত্রীয় শিক্ষাগুরু স্বর্গীয় জ্ঞানদাপ্রসাদ চৌধুরী। কৃতজ্ঞতা ভাষা বা লেখায় প্রকাশ করা যায় না। এ অন্তরের এক আনন্দময় অনুভূতি যে। – শিবশংকর ভারতী, ছবি – সৌজন্যে – গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর