চতুর্থীর দিন এই দেবীর পুজো করলে রোগব্যাধি দূর হয়ে আয়ু লাভ হয়
নবরাত্রি পুজোর চতুর্থ দিনে, এই দেবীর পুজো ও উপাসনা করলে রোগ-ব্যাধি, শোক, তাপ দূর হয়। ভক্তির দ্বারা লাভ হয় যশ বল আরোগ্য ও আয়ু।
রামচন্দ্র দুর্গাপুজোর পক্ষে অকাল বলেছিলেন শরৎকালকে, কেন? শরৎকাল, সূর্যের দক্ষিণায়ন। সমস্ত দেবদেবীর নিদ্রার সময়। অনন্যোপায় ভগবান ব্রহ্মা দেবী দুর্গাকে জাগরিত করলেন স্তবস্তুতি করে। দেবী তখন কুমারীর বেশে এসে ব্রহ্মাকে বললেন, বিল্বমূলে দুর্গার বোধন করতে। দেবীর আদেশ যথানিয়মে পালন করলেন পিতামহ ব্রহ্মা।
মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত নয়রাত্রি ব্যাপী দেবী দুর্গার নয়টি রূপ ও শক্তির যে আরাধনা করা হয় সেটিই নবরাত্রি ব্রত।
দেবী দুর্গার নয়টি রূপের নামকরণ করেছিলেন পিতামহ ব্রহ্মা। নয়টি নামের নয়টি বৈচিত্র্যময় রূপভেদ ও শক্তি। এঁরা প্রত্যেকেই দেবী দুর্গার নয়টি কায়াব্যূহ মূর্তি। এই নয়টি নামের উল্লেখ আছে শ্রীশ্রীচণ্ডীতে।
কুষ্মাণ্ডা
নবদুর্গার চতুর্থ রূপের নাম কুষ্মাণ্ডা। এই দেবীর উপাসনা করা হয় দুর্গা চতুর্থী তিথিতে। চণ্ডীতে উল্লেখ আছে, কুষ্মাণ্ডা। কু (কুৎসিত) উষ্ম (সন্তাপত্রয়) যে সংসারে, সেই সংসার যার অণ্ডে (উদরে) তিনি কুষ্মাণ্ডা = ত্রিবিধতাপযুক্ত – সংসার ভক্ষণকর্ত্রী। জগৎ সৃষ্টির আগে, যখন কোনও অস্তিত্বই ছিল না জগৎ সংসারের, ত্রিভুবন ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, সেই সময় দেবী ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেন ঈষৎ হাসি দ্বারা। ব্রহ্মাণ্ডের কোনও অস্তিত্বই ছিল না দেবীর এই সৃষ্টির আগে। সেই জন্যই দেবী কুষ্মাণ্ডা জগতের আদি শক্তি, আদি স্বরূপা।
দেবী কুষ্মাণ্ডা আটটি বাহুসমন্বিতা। তাই জগতে তিনি দেবী অষ্টভুজা নামে খ্যাত। বাস করেন সূর্যমণ্ডলের অন্তর্লোকে। কারও সঙ্গে তাঁর দেহতেজের তুলনা করা যায় না। দেবী আটটি হাতের মধ্যে সাতটি হাতে ধারণ করে আছেন যথাক্রমে কমণ্ডলু, ধনুক, বাণ, অমৃতভরা কলস, পদ্মফুল, গদা ও চক্র।
কুষ্মাণ্ডা দেবীর আরাধনা করা হয় নবরাত্রি পুজোর চতুর্থ দিনে, এই দেবীর পুজো ও উপাসনা করলে রোগ-ব্যাধি, শোক, তাপ দূর হয়। ভক্তির দ্বারা লাভ হয় যশ বল আরোগ্য ও আয়ু। অতি সামান্য সেবা ভক্তি ও বিশ্বাসেই প্রসন্ন হন দেবী। দুর্গা চতুর্থীতে সাধকের মন অবস্থান করে অনাহত চক্রে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : ‘নবদুর্গা’ অনুবাদিকা গায়ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর। ছবি এঁকেছেন পরমেশ এবং বি.কে. মিত্র। এদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম ক্ষমা প্রার্থী হয়ে। সহায়ক গ্রন্থ শ্রীশ্রীচণ্ডী। এছাড়াও শাস্ত্রীয় শিক্ষাগুরু স্বর্গীয় জ্ঞানদাপ্রসাদ চৌধুরী। কৃতজ্ঞতা ভাষা বা লেখায় প্রকাশ করা যায় না। এ অন্তরের এক আনন্দময় অনুভূতি যে। – শিবশংকর ভারতী, ছবি – সৌজন্যে – গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর