পঞ্চমীর দিন যে দেবীর পুজো করলে অলৌকিক শক্তি বৃদ্ধি হয়
দেবীর উপাসনা করলে তেজ অলৌকিক শক্তি ও কান্তি বৃদ্ধি হয় উপাসকের। দেবী সদা সর্বদা যোগক্ষেম বহন করেন সাধকের।
রামচন্দ্র দুর্গাপুজোর পক্ষে অকাল বলেছিলেন শরৎকালকে, কেন? শরৎকাল, সূর্যের দক্ষিণায়ন। সমস্ত দেবদেবীর নিদ্রার সময়। অনন্যোপায় ভগবান ব্রহ্মা দেবী দুর্গাকে জাগরিত করলেন স্তবস্তুতি করে। দেবী তখন কুমারীর বেশে এসে ব্রহ্মাকে বললেন, বিল্বমূলে দুর্গার বোধন করতে। দেবীর আদেশ যথানিয়মে পালন করলেন পিতামহ ব্রহ্মা।
মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত নয়রাত্রি ব্যাপী দেবী দুর্গার নয়টি রূপ ও শক্তির যে আরাধনা করা হয় সেটিই নবরাত্রি ব্রত।
দেবী দুর্গার নয়টি রূপের নামকরণ করেছিলেন পিতামহ ব্রহ্মা। নয়টি নামের নয়টি বৈচিত্র্যময় রূপভেদ ও শক্তি। এঁরা প্রত্যেকেই দেবী দুর্গার নয়টি কায়াব্যূহ মূর্তি। এই নয়টি নামের উল্লেখ আছে শ্রীশ্রীচণ্ডীতে।
স্কন্দমাতা
পুরাণে নবদুর্গা পর্বে দেবী দুর্গার পঞ্চম রূপটি হল স্কন্দমাতা। কুমার কার্তিকের অপর নাম স্কন্দ। স্কন্দের মাতা হওয়ায় দেবী দুর্গার পঞ্চম রূপ অভিহিত হয়েছে স্কন্দমাতা নামে। দেবী স্কন্দমাতার আরাধনা বা পুজো করা হয় নবরাত্রির পঞ্চম দিনে। দেবীর বিগ্রহ মূর্তিতে কোলে অবস্থান করছে স্বয়ং কার্তিক, বালক রূপে। ছয়টি মাথা, চার হাত। দেবী স্কন্দমাতা সুদর্শনা। চতুর্ভুজা, দেবী ডানদিকের ওপরের হাতে ধরে আছে পুত্র স্কন্দকে, নিচের হাতটিতে ধরা প্রস্ফুটিত পদ্ম তবে উপর দিক করে। বামদিকের উপরের হাতটি নিচে নেমে এসেছে অভয়মুদ্রায়।
বামদিকের নিচের হাতটি উপরে পদ্মশোভিত। দেবী পদ্মাসনা। পদ্মের উপরেই সর্বদা আসীন। নবরাত্রি পুজোর পঞ্চম দিনে স্কন্দমাতারূপী দেবী দুর্গার আরাধনা করলে মোক্ষের দ্বার উন্মোচিত করেন দেবী। সংসার জীবনে থেকেও ভক্ত বা উপাসক জাগতিক পরম সুখ ও অপার শান্তিলাভ করে থাকে। দেবী স্কন্দমাতা হলেন সূর্যমণ্ডলের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই দেবীর উপাসনা করলে তেজ অলৌকিক শক্তি ও কান্তি বৃদ্ধি হয় উপাসকের। দেবী সদা সর্বদা যোগক্ষেম বহন করেন সাধকের।
নবরাত্রির পঞ্চম দিনে উপাসকের মন অবস্থান করে বিশুদ্ধ চক্রে। ফলে লুপ্ত হয়ে যায় সমস্ত বাহ্য ক্রিয়া ও চিত্তবৃত্তি। মন অগ্রসর হয় বিশুদ্ধ চৈতন্য স্বরূপের দিকে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : ‘নবদুর্গা’ অনুবাদিকা গায়ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর। ছবি এঁকেছেন পরমেশ এবং বি.কে. মিত্র। এদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম ক্ষমা প্রার্থী হয়ে। সহায়ক গ্রন্থ শ্রীশ্রীচণ্ডী। এছাড়াও শাস্ত্রীয় শিক্ষাগুরু স্বর্গীয় জ্ঞানদাপ্রসাদ চৌধুরী। কৃতজ্ঞতা ভাষা বা লেখায় প্রকাশ করা যায় না। এ অন্তরের এক আনন্দময় অনুভূতি যে। – শিবশংকর ভারতী, ছবি – সৌজন্যে – গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর